উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি দুই সিটির নতুন ওয়ার্ডগুলোতে

সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়া নতুন ওয়ার্ডঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নতুন যোগ হওয়া অধিকাংশ ওয়ার্ড উন্নয়নবঞ্চিত। তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টিতে উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৮টি ওয়ার্ডের একটিতেও উন্নয়নের কোনও ছোঁয়া লাগেনি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওইসব এলাকার বাসিন্দারা।

২০১৬ সালের মে মাসে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আশপাশের ৮টি করে মোট ১৬টি ইউনিয়ন যোগ করা হয়। পরবর্তীতে এই ইউনিয়নগুলোকে নতুন ওয়ার্ডে বিভক্ত করা হয়। এর মধ্যে ডিএসসিসির শ্যামপুর ইউনিয়নকে ৫৮ ও ৫৯, দনিয়াকে ৬০, ৬১ ও ৬২, মাতুয়াইলকে ৬৩, ৬৪ ও ৬৫, সারুলিয়াকে ৬৬, ৬৭ ও ৬৮, ডেমরাকে ৬৯ ও ৭০, মান্ডাকে ৭১ ও ৭২, দক্ষিণগাঁওকে ৭৩ ও ৭৪ ও নাসিরাবাদকে ৭৫ নং ওয়ার্ড করা হয়েছে।  উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি দুই সিটির নতুন ওয়ার্ডগুলোতে

এর মধ্যে ৫৮, ৫৯, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৩,  ৬৪, ৬৫, ৬৬,  ৬৭ ও ৬৮ নং ওয়ার্ড এলাকায় সড়ক যোগাযোগ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ শুরু করেছেন ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। যদিও কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় দুই প্রকৌশলীকে বরখাস্ত ও একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ডিএসসিসির ওই ১১ ওয়ার্ডে কাজ শুরু হয়। যা শেষ হওয়ার কথা ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে। এতে ৭৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫২ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন, সাত হাজার ৬৩টি গাছ রোপণ, ১৫৮ কিলোমিটার ড্রেনের উন্নয়ন, ছয় কিলোমিটার ফুটপাত উন্নয়ন এবং রাস্তায় এলইডি লাইট লাগানো হবে। এছাড়া ডিএসসিসির উন্নয়নবঞ্চিত নতুন ওয়ার্ডগুলো হলো ৬৯, ৭০, ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৪ ও ৭৫ নং ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডগুলোতে উন্নয়নের কোনও পদক্ষেপ বা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়নি।সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়া নতুন ওয়ার্ডগুলোর রাস্তা অল্প বৃষ্টিতেই এমন বেহাল দশায় পড়ে

অন্যদিকে, ডিএনসিসিতে যুক্ত হওয়া ৮টি ইউনিয়নকে ভেঙে ১৮টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাড্ডা ইউনিয়নকে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড, ভাটারাকে ৩৯ ও ৪০ ওয়ার্ড, সাঁতারকূলকে ৪১ নম্বর ওয়ার্ড, বেরাইদকে ৪২ নম্বর ওয়ার্ড, ডুমনিকে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড, উত্তরখানকে ৪৪, ৪৫ ও ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড, দক্ষিণখানকে ৪৭, ৪৮, ৪৯ ও ৫০ নম্বর ওয়ার্ড এবং হরিরামপুরকে ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়। এই ১৮টি ওয়ার্ডের আয়তন ১১৩ দশমিক ৫৯ বর্গকিলোমিটার। মন্ত্রীর আশ্বাসের পরও সেখানে কোনও প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির সচিব দুলাল কৃষ্ণ সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নতুন ওয়ার্ডগুলোতে এখনও উন্নয়ন কাজ শুরু হয়নি। তবে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে। তবে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদন হতে আরও এক-দেড় মাস সময় লাগবে। এরপর কাজ শুরু হবে।’উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি দুই সিটির নতুন ওয়ার্ডগুলোতে

জানতে চাইলে ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের নতুন ১১টি ওয়ার্ডে উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। বাকি ৭টি ওয়ার্ডেও পর্যায়ক্রমে উন্নয়ন কাজ শুরু করা হবে। মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে ইউনিয়নগুলোকে বাসযোগ্য নগরীর রূপ দিতে চাই।’

দুই সিটির কর্মকর্তারা জানান, অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ইউনিয়নগুলোকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা সময়সাপেক্ষ। তবে মহাপরিকল্পনার আওতায় সড়কের আয়তন নির্ধারণ, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ, পয়ঃনিষ্কাশন, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খেলার মাঠ, পার্ক, কমিউনিটি সেন্টার, জলাধার সংরক্ষণ, সড়কবাতি, ওয়ার্ড কার্যালয়, হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ, ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ শুরু করা হবে। এজন্য প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে। তবে কবে নাগাদ প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে সে বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেনি সংস্থা দুটি।উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি দুই সিটির নতুন ওয়ার্ডগুলোতে

এদিকে, সম্প্রতি ডিএসসিসির ৫৯ নং ওয়ার্ড মোহাম্মদবাগের চৌরাস্তা থেকে মিরাজনগর এলাকায় ড্রেন নির্মাণে মাটির প্রলেপ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরে প্রলেপ খুলতে গেলে দেয়ালে ফাটল ধরে ভেঙে পড়ে। এ ঘটনায় মেয়র সাঈদ খোকন সংশ্লিষ্ট দুই প্রকৌশলীকে বরখাস্ত করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেন।

শ্যামপুরের মোহাম্মদবাগের বাসিন্দা মোবারক হোসেন বলেন, ‘উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু নির্মাণের কয়েক ঘণ্টা পর যদি ভেঙে পড়ে তাহলে এই উন্নয়ন কয়দিন টিকবে? টেকসই উন্নয়ন করতে হবে। না হলে জনগণের টাকা ব্যয় করে লাভ কী?’উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি দুই সিটির নতুন ওয়ার্ডগুলোতে

দক্ষিণগাঁও এলাকার ৭৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোতাহার আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগে তো ইউনিয়ন পরিষদ থেকে কিছু সেবা পেতাম। এখন সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়ার পর কোনোটিই পাচ্ছি না। রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ।’