রবিবার বনানী কবরস্থানে ভাইয়ের কবর জিয়ারত শেষে ফেরার সময় বাংলা ট্রিবিউনকে এসব কথা বলেন তিনি।
মাসুদা সাঈদ শেলী বলেন, ‘আমরা কী পেলাম বা কী চাই সেটা বড় কথা নয়। কিন্তু আমরা যা হারিয়েছি, তা পূরণের না। আমাদের বুকে যে ক্ষত তা কখনও শুকাবে না। এটা পূরণের না।’
এ সময় তিনি রাষ্ট্রের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আর কতকাল এভাবে চোখের পানি ঝরাবো? আমার ভাইয়ের মেয়ে সুমেরা বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় পড়ালেখা করছে।’
রবিবার সকাল থেকেই বিডিআর বিদ্রোহে নিহত প্রত্যেকের পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা বনানী কবরস্থানে আসতে থাকেন। একসময় কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কান্না শুরু করেন তারা। এ সময় আশপাশের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে।
নিহত মেজর মিজানুর রহমানের মা কহিনূর বেগম প্রতিবছরের মতো এবারও কবরস্থানে এসেছেন বড় ছেলে লে. কর্নেল ফেরদৌসের সঙ্গে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মিজানুরের বড় ছেলে তাহসিন রহমান রামি (১৫)। রামি বর্তমানে মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজে পড়াশুনা করছেন। দাদী ও চাচার সঙ্গে রামি বাবার কবর জিয়ারত করেছিলেন।
মেজর মিজানুর রহমানের মা কহিনূর বেগম ছেলের কবরের পাশে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এসময় তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘটনার দিন সকালে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার আগে আমাকে বলে, মা তুমি সামিকে দেখো। এরপর আমার বাবা আমাকে আর মা ডাকলো না, আর কথা বলল না। সামির বয়স তখন তিন বছর। এখন সামি স্কুলে যায়। কিন্তু মিজান কিছুই দেখতে পেলো না।’ এরপর তিনি আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন।
মেজর মিজানুরের বড় ভাই লে. কর্নেল ফেরদৌস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী সদরে। দেশপ্রেম থেকেই সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছি। মিজান আমার ছোট। ঘটনার আট মাস আগে ওর স্ত্রী রেবেকা ফারহানা রোজী মারা যায়। তাদের দুই ছেলে। বড় ছেলে তাহসিন রহমান রামি (১৫) ও ছেটে ছেলে ফারজিন রহমান সামি (১০)। বড় ছেলে এবার মির্জাপুর ক্যাটেড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। ছোট ছেলে সামি পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। আমিই এখন দুই ছেলের দেখাশুনা করি। ছোট ছেলেটা আমাদের মায়ের কাছেই থাকে।’
পাশেই শহীদ মেজর মমিনুল ইসলাম সরকারের বাবা ও বোন বিলাপ করছিলেন। মেয়েদের নিয়ে ছেলের কবর জিয়ারত করতে এসেছেন মফিজুল ইসলাম সরকার। তারাও দ্রুত বিচার কার্যকরের দাবি জানান।
নিহত মেজর মোস্তফা আসাদুজ্জামানের বোন হোসনে আরা পারভীন তার ভাইয়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন। তিনি কবর জিয়ারত শেষে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার ভাইকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, আমরা তার বিচার চাইতে পারি। তবে রায় ও বিচার নিয়ে আমি এই মুহূর্তে কোনও মন্তব্য করতে চাই না। আমরা ৯ বছর ধরে অপেক্ষা করছি। রায় কার্যকর হয় কিনা আমরা জানি না।’
সবার মতো নিহত মেজর মমিনুল ইসলামের ভাই ডা. শাহরিয়ার পরিবার ও স্বজন নিয়ে ভাইয়ের জন্য দোয়া করেছেন সামরিক কবরস্থানে। তিনি চলে যাওয়ার সময় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা দ্রুত বিচার কার্যকর দেখতে চাই। আমাদের ক্ষতের জায়গাটা একটু হলেও শুকাবে যদি দেখি অপরাধীদের শাস্তি হয়েছে।’
এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা নিহতদের প্রতি স্যালুট প্রদর্শন করেন। পরে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এরপর তাদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। বিদ্রোহী সদস্যদের হাতে বিডিআর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদও নিহত হন। বিদ্রোহীদের হাত থেকে রেহাই পাননি ডিজির স্ত্রী, বাসার কাজের মেয়ে ও বেড়াতে আসা আত্মীয়-স্বজনও।
বনানী কবরস্থানে নিহতের স্বজনদের বিলাপ: আরও পড়ুন:
‘একটি মামলার রায় হয়েছে, আরেকটির রায় এ বছর হবে’