মহাকাব্যের কবি ও নির্মলেন্দু গুণ

কবি নির্মলেন্দু গুণ (ফাইল ফটো)একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে/লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে/ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে-‘কখন আসবে কবি?’ ‘কখন আসবে কবি?’ এই শিশুপার্ক সেদিন ছিল না, এই বৃক্ষে-ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না, এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না। তাহলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি?

উপস্থিত জনসমাবেশ বলছে, হয়তো আজকের মতোই ছিল দিনটি। সেদিন যে জাগরণের উদ্ভব ঘটেছিল, আজকের বাংলাদেশ সেটি ধারণ করেই সামনে এগিয়ে যাবে। কেমন ছিল সেদিনের বিকেলটি তা দেখেছিলেন নির্মলেন্দু গুণ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ভাষণের কাব্যগুণ ছিল। সেটি মহাকাব্যের মর্যাদায় আসীন হয় তখনই, যখন কিনা যুগ যুগ ধরে সেই বক্তৃতা হয়ে ওঠে অমরবাণী। আর এই ভাষণের সেই সব গুণ আছে বলেই মানুষ শুনে শুনে এই ভাষণ মুখস্থ করে; মনের গভীরে উচ্চারণ করতে পারে আজও ।’

আজ ৭ মার্চ ঐতিহাসিক দিনটিকে স্মরণ করতে আয়োজিত জনসভায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কবি নির্মলেন্দু গুণ শোনালেন, ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ কবিতাটি। তিনি এই কবিতাটি লিখেছিলেন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনে। যে ভাষণ মানুষের মনের কথা, চাহিদাকে ধারণ করতে পেরেছিল। নির্মলেন্দু লিখেছিলেন—শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে/অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন। তখন পলকে দারুণ ঝলকে তরীতে উঠিল জল/ হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিল জোয়ার সকল দুয়ার খোলা; কে রোধে তাঁহার বজ্র কণ্ঠ বাণী?

সংস্কৃতিকর্মী লায়লা আফরোজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মানুষের মনে সেই কথা গেঁথে যায়, যার সঙ্গে সে নিজেকে রিলেট করতে পারে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাকামী মানুষ, তাদের আকাঙ্ক্ষায় তখন মুক্তির আহ্বান শোনার অপেক্ষা। বঙ্গবন্ধু সেই কাজটি যখন করেছেন, সেটিই তাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা হয়ে ওঠে।’

সেখান থেকে বেরিয়ে আসা গুণের কবিতা নিয়ে কবি নিজে বলেন, ‘আমি সেদিনটি এবং সেদিনের উপস্থিত মানুষদের দেখেছিলাম। বঙ্গবন্ধু কথা বলায়, যে ছন্দ সেদিন ছিল, তা কাব্যিক রূপ লাভ করলো। সে কাব্য যখন মানুষের মনের কথাকে সামনে হাজির করলো, তখন সেটি চিরায়িত রূপ নিলো। এই জায়গা থেকেই পরে আমি কবিতাটি লিখেছি। মানুষের আগ্রহ এবং উপস্থিত মানুষের আকাঙ্ক্ষার জায়গাটা সেদিন কেমন ছিল, সেটিই তুলে ধরতে চেষ্টা করা হয়েছে।’

আজকের জনসভার শুরুতেই কবিতাটি পাঠ শুরু করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। কবিতা পাঠের শুরুতে কবি বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে লেখা কবিতা, ৭ মার্চে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আবৃত্তি করছি। এরকম সুযোগ পৃথিবীর আর কোনও কবির পক্ষে পাওয়া সম্ভব হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।’