নেপালের ৬ কর্মকর্তাকে সরিয়ে নেওয়া সন্দেহের চোখে দেখছে ইউএস বাংলা

ইউএস বাংলার বিধ্বস্ত বিমাননেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারে দায়িত্বরতদের মধ্যে ৬ কর্মকর্তাকে সরিয়ে নেওয়াকে সন্দেহের চোখে দেখছে ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) বিকালে প্রেস ব্রিফিংয়ে এমন মন্তব্য করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। ইউএস বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের সময় তারা সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন। শোক থেকে বের করে আনার জন্য তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি নেপালের বিমান কর্তৃপক্ষের।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে ওই কর্মীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার খবর দিয়েছে নেপালি সংবাদমাধ্যম মাই রিপাবলিকা। একই বিষয়ে খবর ছেপেছে নেপালি সংবাদমাধ্যম অন্নপূর্ণা পোস্ট।

ইউএস বাংলার জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ত্রিভুবন এয়ারপোর্ট ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারের ৬ কর্মকর্তা বদলি হওয়াটা পুরো বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। নেপালের বিভিন্ন পত্রিকায় বদলির বিষয়টি উঠে এসেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। দুর্ঘটনার আগে টাওয়ার ও পাইলটের মধ্যে কথোপকথনে একটি জটিলতা ছিল। এ কারণেই প্রত্যক্ষদর্শী ৬ জনকে বদলি করার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ।’

যদিও নেপালের বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক রায়হান পোকহারেল বলেছেন, ‘এমন দুর্ঘটনার পর স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মেনেই তাদের অন্যত্র সরানো হয়েছে। তারা একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখেছে ও শোকে আচ্ছন্ন। চাপ কমাতেই আমরা তাদের অন্য বিভাগে স্থানান্তর করেছি।’

ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, কন্ট্রোল রুমের ভুল বার্তাই দুর্ঘটনার কারণ। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের সিইও আসিফ ইমরান দুর্ঘটনায় কন্ট্রোল রুমের যোগাযোগ ত্রুটিকে দায়ী করেছেন।

অন্য একটি অডিও কথোপকথন সূত্রে কাতারভিত্তিক আল জাজিরাও দুর্ঘটনার নেপথ্যে কন্ট্রোল রুমের ভূমিকার আশঙ্কার কথা বলেছে।

বিমানবন্দরের কন্ট্রোল রুম থেকে পাইলটের কথোপকথনের বিবরণ দিয়ে নেপাল টাইমস জানায়, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ার (এটিসি) থেকে বৈমানিককে বলা হচ্ছে, ‘আমি আবার বলছি, রানওয়ে টোয়েন্টির দিকে এগোবেন না।’ বৈমানিক অপেক্ষা করছেন বলে জানান। কন্ট্রোল রুম তাকে উড়োজাহাজ অবতরণ না করে অপেক্ষা করতে বলেন। কারণ আরেকটি বিমান ওই রানওয়ের দিকে এগিয়ে আসছে।
বিমানটি ডানদিকে ঘুরে গেলে এটিসি থেকে জানতে চাওয়া হয়, বৈমানিক কি রানওয়ে জিরো টুতে (উত্তর প্রান্ত) ল্যান্ড করবেন নাকি রানওয়ে টু জিরোতে (দক্ষিণ প্রান্ত)? ইউএস বাংলার পাইলট জানান, তারা রানওয়ে টু জিরোতে (২০) ল্যান্ড করবেন। এরপর জানতে চাওয়া হয় তিনি রানওয়ে দেখতে পারছেন কিনা। পাইলট নেতিবাচক উত্তর দেন। এবার এসিটি থেকে তাকে ডানদিকে ঘুরতে বলা হয়। তখন পাইলট জানান, তিনি রানওয়ে দেখতে পাচ্ছেন। বলেন, জিরো টু-তে অবতরণ করার জন্য প্রস্তুত।

কন্ট্রোল টাওয়ার জানিয়ে দেয়, বাংলাদেশের বিমানটিকে টু-জিরোতে নামার চূড়ান্ত অনুমতি দেওয়া হয়েছে (একটু আগেই কথা হয়েছে জিরো টুর বিষয়ে)। এ সময় প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে একটি সামরিক বিমানকে অপেক্ষায় রাখা হয়েছিল। এরপর ইউএস বাংলার পাইলট জানতে চান, ‘স্যার আমরা কি অবতরণের অনুমতি পেয়েছি?’ কিছুক্ষণ নীরবতার পরই কন্ট্রোলের চিৎকার শোনা যায়, আমি আবার বলছি, ঘুরে যান। এরপরই ফায়ার ওয়ানকে ডাকা হয়, যার মানে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরপর নেপালি একজন পাইলটের প্রশ্নের জবাবে রানওয়ে বন্ধ বলে জানানো হয়।