এয়ারফোর্সের বিমান প্রস্তুত, লাশ দেশে পাঠানো হবে দ্রুত: বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত

নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামসইউএস বাংলার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের লাশ দেশে দ্রুত পাঠানোর জন্য এয়ারফোর্সের বিমানকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস এ তথ্য জানিয়েছেন। এদিন বাংলাদেশ থেকে যাওয়া সাংবাদিকদের আরও কিছু খবর দেন তিনি।

কতদিন পর লাশ দেশে পাঠানো সম্ভব হবে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সময় বলা মুশকিল। কারণ এখানে বেশকিছু প্রক্রিয়া আছে। খেয়াল রাখতে হবে, এমন বড় কোনও দুর্ঘটনা নেপালে গত ২৫ বছরে হয়নি। তাই এমন পরিস্থিতিতে প্রস্তুত থাকলেও কিছু সমস্যা দেখা যায়।’

মাশফি বিনতে শামস জানান, বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা নেপালি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। লাশ শনাক্ত দ্রুত করা ও স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া বা দেশে পাঠানোই তাদের লক্ষ্য। ইতোমধ্যে কোঅর্ডিনেশন সেল খোলা হয়েছে দূতাবাসে।’

মঙ্গলবার সকাল থেকে লাশ পাঠানোর প্রক্রিয়া নিয়ে দূতাবাস সক্রিয় আছে বলেও জানান মাশফি বিনতে শামস। তিনি জানিয়ে রাখলেন, ‘এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পেরেছি ১০ জন জীবিত আছেন। তারা এখানকার তিনটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। দূতাবাসের পক্ষ থেকে আমি তাদের সঙ্গে দেখা করেছি।’

আহতরা কতটুকু শঙ্কামুক্ত প্রশ্ন করা হলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘তাদের মধ্যে এককজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকিদের ব্যাপারে আশ্বাস পেয়েছি। আশা করা যাচ্ছে, অল্প কিছুদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠবেন তারা।’

আহতদের স্বজনরা যদি তাদের নিয়ে যেতে চান সেক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? রাষ্ট্রদূতের উত্তর— ‘যিনি শঙ্কায় আছেন তাকে স্বজনরা ব্যাংকক বা সিঙ্গাপুরে নিতে চান। আমরা ইউএস বাংলার সঙ্গে যোগাযোগটা করিয়ে দিচ্ছি যাতে এয়ারবাসে নেওয়া সম্ভব হয়।’

হতাহতদের ৪৬ জন আত্মীয়কে নিয়ে নেপালে পৌঁছায় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ। নেপালের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৩৭ মিনিটে ত্রিভুবন বিমানবন্দরে উড়োজাহাজটি অবতরণ করে। তাদের এনে একটি ব্রিফিং দিয়ে দূতাবাসের ট্রান্সপোর্টে গন্তব্যে পাঠানো হয়।

দুর্ঘটনার পরবর্তী সময়ে কোনও গাফলতি ছিল না বলে মন্তব্য রাষ্ট্রদূতের। তার কথায়, ‘যথেষ্ট দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ফায়ার ব্রিগেড ও সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সব সংস্থার লোকজন তাদের কাজ করেছেন। এখানকার প্রধানমন্ত্রী সেখানে গেছেন। দুই ঘণ্টার মধ্যে সবাইকে বের করে আনা গেছে।’

নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারে দায়িত্বরতদের মধ্যে ৬ কর্মকর্তাকে সরিয়ে নেওয়াকে সন্দেহের চোখে দেখছে ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) বিকালে প্রেস ব্রিফিংয়ে এমন মন্তব্য করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। ইউএস বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের সময় তারা সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন। শোক থেকে বের করে আনার জন্য তাদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি নেপালের বিমান কর্তৃপক্ষের।

উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার নেপথ্যে কন্ট্রোল রুমের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। ত্রিভুবন বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ার (এটিসি) রুমের রুমের যোগাযোগ ত্রুটিকে দুর্ঘটনার কারণ মনে করছে ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষ।

এ প্রসঙ্গে মাশফি বিনতে শামস বলেন, ‘সিভিল এভিয়েশন বিষয়টি তদন্ত করছে, ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার হয়েছে। যারা ঘটনাস্থলে ছিলেন, তাদের প্রত্যেকের সাক্ষ্য নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি হবে। কার ভুলে এই দুর্ঘটনা তা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।’

সোমবার (১২ মার্চ) চার ক্রু ও ৬৭ যাত্রীসহ ৭১ জন আরোহী নিয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে নেপালের স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে পৌঁছায়। অবতরণের সময় এতে আগুন ধরে যায়। এরপর বিমানবন্দরের কাছেই একটি ফুটবল মাঠে সেটি বিধ্বস্ত হয়।

এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫০ জন। এর মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিক ২৬ জন। এছাড়া বেঁচে আছেন আরও ১০ বাংলাদেশি।