‘চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেলো’ (ভিডিও)

বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলছেন মিনহাজুর রহমান‘আমাদের সঙ্গে একটা শিশু ছিল, সে উড়োজাহাজ উড়ে আসতে দেখেই বলল, ওই যে আমাদের প্লেন আসছে। ল্যান্ড না করে উড়োজাহাজটি রাউন্ড দিয়ে চলে যায় তখন। প্রায় ১০ মিনিটি আর উড়োজাহাজটিকে দেখা যায়নি। শিশুটি চিৎকার দিয়ে প্লেন আসছে বলাতেই উড়োজাহাজটি নজরে আসে। প্রায় ১০ মিনিট পর আবার আসে উড়োজাহাজটি, ডান পাশে কাত হয়ে আসছিল। কাত অবস্থায় ল্যান্ড করতে এগোতেই পড়ে যায় এটি। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ধরে যায় উড়োজাহাজটিতে। চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেলো। আমরা চিৎকার করছিলাম, এ যে আমাদের বিমান গেলো।’ এভাবেই মঙ্গলবার (১৩ মার্চ) বাংলা ট্রিবিউনের কাছে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন মোস্তফা মোহাম্মদ মিনু। সোমবার (১২ মার্চ) নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেশের ফেরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি।

২১ জনের একটি দল নিয়ে নেপালে বেড়াতে গিয়েছিলেন মোস্তফা মোহাম্মদ মিনু । সোমবার রাতে নেপাল থেকে দেশে ফেরেন তারা। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব মানসিক চাপের মধ্যে ছিলাম, এখনও আছি। আমাদের দেশের মানুষ দুর্ঘটনায় পড়ছে। আমারাও হয়ত এ ঘটনার মধ্য ‍দিয়ে যেতে পারতাম। এয়ারপোর্ট তখন সিলগালা করে দিলো। কোনও বিমান নামেনি। তখন আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেলাম।  আমরা যে পরিস্থিতি দেখেছি, তাতে কেউ বেঁচে যাবে মনে হয়নি।’

মোস্তফা মোহাম্মদ মিনু বলেন, ‘আমার পরিবার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আমি স্ত্রী, সন্তানদের রেখে গিয়েছিলাম। আমার পরিবারের সবাই আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন।’

মো. রাসেল নামের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘এত আগুন আর ধোঁয়া আগে কখনও দেখিনি। প্রায় এক ঘণ্টার মতো আগুন জ্বলতে দেখেছি। এরপর টানা ৩/৪ ঘণ্টা  চলে উদ্ধার অভিযান। পুরো বিমানবন্দরজুড়ে সবার মধ্যে আতঙ্ক। আমাদের সোমবার তিনটার দিকে নেপাল থেকে ইউএস বাংলার ফ্লাইটে দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু  উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ায় সেটি সম্ভব হয়নি। পরে রিজেন্ট এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় ফিরেছি রাত সাড়ে ১০টার দিকে।’

রাসেল আরও বলেন, ‘হোটলে থেকে দুপুর ১২টার দিকে বের হয়ে ১টার মধ্যে আমরা কয়েকজন ত্রিভুবন বিমানবন্দরে চলে আসি। চেক ইন করে আমরা অপেক্ষা করছিলাম উড়োজাহাজ কখন আসবে। হঠাৎ বিকট শব্দ। বাইরে তাকিয়ে দেখি ধোঁয়া আর আগুন। বিমানবন্দরের ভেতরে ভয়ে অনেকেই চিৎকার শুরু করেন। কিছুক্ষণ পর বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিমানবন্দরের সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।’

মিনহাজুর রহমান নামের আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘আমাদের চেক ইন হয়ে গিয়েছিল। অপেক্ষা করছিলাম উড়োজাহাজ আসার জন্য। বিমানটি ল্যান্ড করার সময় বিধ্বস্ত হয়। আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে। অনেক ধোঁয়া দেখেছি, তবে পানির স্বল্পতা ছিল। আরোহীদের উদ্ধার করতে অনেকে জড়ো হয়লেও আগুনের তীব্রতা বেশি থাকায় কেউ কাছে যেতে পারছিল না। যেভাবে পুড়েছে তাতে কারও বেঁচে থাকা কঠিন।’

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ওই উড়োজাহাজ সোমবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুর্ঘটনায় পড়ে।  ৭৮ জন ধারণে সক্ষম কানাডার তৈরি ড্যাশ-৮-কিউ৪০০ উড়োজাহাজটিতে ৪ জন ক্রু ও ৬৭ যাত্রী মিলে ৭১ জন আরোহী ছিলেন। এর মধ্যে ৩৭ জন পুরুষ, ২৮ জন নারী ও দুটি শিশু ছিল। আরোহীদের মধ্যে চার ক্রুসহ ৩৬ জন বাংলাদেশি, ৩৩ জন নেপালি, একজন চীনা ও একজন মালদ্বীপের নাগরিক ছিলেন।