রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফেরত পাঠাতেই মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক: পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় রোহিঙ্গা সংকটে যৌথ সহায়তা পরিকল্পনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেপররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন,‘মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেওয়া ছাড়াও দায়িত্বশীল ও সচেতন জাতি হিসেবে বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। যেন রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়’।

শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় রোহিঙ্গা সংকটে যৌথ সহায়তা পরিকল্পনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। জাতিংসঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম এবং জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ বিষয়ক সংস্থা ওসিএইচএ’র সমন্বয়ে এই যৌথ সহায়তা পরিকল্পনা গঠন করা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,যৌথ সহায়তা পরিকল্পনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ৯৫ কোটি ১০ লাখ ডলার যোগাড় করা হবে। যা ২০১৮ সালে মার্চ থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তার জন্য ব্যয় করা হবে।

জাতিসংঘের বিভিন্ন সদস্য দেশ ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সে সময় আইওএম’র মহাপরিচালক রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম লেসি সুইং,জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপো ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মহাসচিব ফিরো সালাহ উদ্দিন বক্তব্য দেন।এছাড়া জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি শামীম আহসান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন,‘বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পর রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে রাখাইন রাজ্যে সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব মিয়ানমার সরকারের।জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।’

রোহিঙ্গা সংকটের শিকড় খুঁজে বের করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানের বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কয়েক দশক ধরে চালানো কৌশলগত নির্যাতন, বৈষম্য ও বর্জনের নীতি ফল হিসেবেই আজকের সংকট দেখা দিয়েছে। বন্ধুপ্রতিম দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সমর্থন ও সহায়তা আদায় করতে যৌথ সহায়তা পরিকল্পনা কাজ করে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী। তুলনামূলক টেকসই সমাধান অর্জনের জন্য রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনযোগ রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন শাহরিয়ার আলম।

অনুষ্ঠানে আইএমও মহাপরিচালক ও শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনারসহ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নেদার‌ল্যান্ডের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন। তারা রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করায় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি প্রশংসা করেন। তারা সরকারের চলমান মানবিক সহায়তা কার্যক্রমেরও প্রশংসা করেন। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ওআইসি, ডব্লিউএফপি, ইউনিসেফ, ওএইচসিএইআর, বিশ্ব ব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউএনএফপিএ, বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ও ইউএন-উইমেনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা রোহিঙ্গাদের প্রতি সমর্থন ও সহায়তা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। এছাড়া যৌথ সহায়তা পরিকল্পনার বাস্তবায়নেও সহযোগিতার আশ্বাস দেন প্রতিনিধিরা।

এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ছাড়াও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডির সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন।