দুই কারণে মরদেহ হস্তান্তরে দেরি হচ্ছে: ডা. সোহেল মাহমুদ

 

ডা. সোহেল মাহমুদনেপালে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহতদের মরদেহ হস্তান্তরে দুটি কারণে সময় বেশি লাগছে বলে মনে করেন ডা. সোহেল মাহমুদ। বাংলাদেশ থেকে নেপালে যাওয়া চিকিৎসক প্রতিনিধি দলের এই সদস্যের মতে, কারণ দুটির একটি হলো নেপালি চিকিৎসকরা অনেক বেশি ট্র্যাডিশন (ঐতিহ্য) মেনে কাজ করেন আর দ্বিতীয়টি হলো, এখানে আইনি জটিলতা বেশি।
শনিবার (১৭ মার্চ) ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘বিষয়টি সবারই জানা যে নেপাল চিকিৎসা সেক্টরে অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে। তারা অবশ্যই আমাদের দেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে, কিন্তু আমরাও সর্বোৎকৃষ্ট নই। তবে ময়নাতদন্ত করার কিছু ভালো ব্যবস্থা আছে। এটা মোটের ওপর খারাপ নয়।’
তাহলে মরদেহ হস্তান্তরে তারা এত বেশি সময় নিচ্ছে কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে নেপালের চিকিৎসকরা বড় বেশি ট্র্যাডিশনাল, যার কারণে মরদেহ হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় এত সময় লাগছে। যদি আমাদের দেশে এমন দুর্ঘটনা হতো, তাহলে আমার এর মধ্যে কেবল ময়নাতদন্ত করে মরদেহ হস্তান্তর করাই নয়, ডিএনএ টেস্টও করে ফেলতাম।’
নেপালি চিকিৎসকদের ট্র্যাডিশন মেনে চলার বিষয়ে ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দেশে আমরা মরদেহ পাওয়ার সময়ই ডিএনএ’র জন্য নমুনা নিয়ে সেটি পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দিই। এরপর ময়নাতদন্ত করি। এ প্রক্রিয়ায় আমরা দ্রুত মরদেহ হস্তান্তর করতে পারি। কিন্তু এখানে ময়নাতদন্ত করার সময় ডিএনএ’র জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আমরা যখন ডিএনএ’র জন্য দাঁত দিতে বললাম, তারা বললেন, এভাবে দাঁতের নমুনা নেওয়া অনৈতিক।’
বিষয়টি কখনও অনৈতিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যখন তারা (নেপালি চিকিৎসকরা) ময়নাতদন্ত করেন তখন পুরো মরদেহ কাটেন, প্রয়োজন অনুযায়ী তারা বুক-মাথা সবই কাটেন। তাহলে এটা কীভাবে অনৈতিক হবে!’ তিনি বলেন, ‘এখানে আইনগত প্রচুর জটিলতা রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ও নেপাল উভয় পক্ষের মানুষের অনেক ভোগান্তি হচ্ছে।’

গত ১২ মার্চ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের আগ-মুহূর্তে পাশের একটি ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয়। ৬৭ যাত্রী ও চার ক্রুসহ ৭১ জন আরোহী ছিলেন ওই ফ্লাইটে। এর মধ্যে ৪৯ জন নিহত হয়েছেন।

নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশের ২৬ জন ও নেপালের ২২ জন। এছাড়া চীনের একজন যাত্রী নিহত হন। আহতদের মধ্যে ১০ জন বাংলাদেশি, ১২ জন নেপালের ও একজন মালদ্বীপের নাগরিক।
ওই ফ্লাইটে থাকা আহত ১০ বাংলাদেশির মধ্যে পাঁচ জন নেপালের হাসপাতাল ছেড়েছেন। তাদের মধ্যে রেজওয়ানুলকে কাঠমান্ডুর ওএম হাসপাতাল থেকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে। আর শাহরিন আহমেদ, মেহেদী হাসান, তার স্ত্রী সৈয়দা কামরুন নাহার স্বর্ণা ও মেহেদীর ভাবি আলমুন নাহার অ্যানি কাঠমান্ডুর কেএমসি থেকে দেশে ফিরেছেন। তাদের ভর্তি করা হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে।