সোমবার বেলা ৩টা। আর্মি স্টেডিয়ামে একে একে ঢুকছেন নেপালে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা। ২৩টি পরিবারের কেউ কাউকে চেনেন না, কিন্তু আজ তারা যেন পরস্পরের কত চেনা। একইভাবে তারা পরিবারের স্বজনদের হারিয়েছেন। একসঙ্গে জানাজা পড়ে স্বজনদের মরদেহগুলো নিয়ে ফিরবেন যার যার গন্তব্যে। লাশ স্টেডিয়ামে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে আর্তনাদে ভরে ওঠে পুরো মাঠ। কোথাও কোনও প্রশান্তি নেই, চারপাশে কেবল শোক।
এরপর আসে সেই ক্ষণ। জানাজার নামাজ শেষ, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর শ্রদ্ধা জানালেন। এরপর একে একে নিহতদের নাম ডেকে স্বজনদের আহ্বান জানানো হয় লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য। পুরো স্টেডিয়ামে তখন শোকের মাতম। সবাই যার যার শোক পালন করছেন। কেউ হয়তো কাউকে চেনেন না, কিন্তু পাশে হাতটা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন।
আরও পড়ুন: আর্মি স্টেডিয়ামে স্বজনদের কান্না
পুরোটা সময় চিৎকার দিয়ে কেঁদেছেন পৃথুলার মা। খালারা পাশ থেকে সমবেদনা জানাচ্ছেন বটে, কিন্তু তাদেরও বুক ভাঙা কান্না। পৃথুলার স্বজনের মধ্যে এসেছেন বাবা কাজল এবং মা মাহফুজা, খালা ফিরোজা এবং মামা সাইফুর রহমান। মামা জানান, লাশ শ্যামলীর আশা টাওয়ারে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে বাদ মাগরিব জানাজা শেষে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে। যে মা আকাশ ছোঁয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন সেই আকাশ মেয়েকে কেড়ে নিয়েছে। এবার কার কাছে অভিযোগ জানাবেন মা!
যার যেখানে দাফন
পৃথুলার লাশ শ্যামলীতে আশা টাওয়ারে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে বাদ মাগরিব জানাজা শেষে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হবে। আক্তারা বেগমের লাশ এখান থেকেই রাজশাহীতে নিয়ে যাবে দুই মেয়ে। নিহত এসএম মাহমুদুর রহমানের মরদেহ যাবে ফরিদপুরের নিজ এলাকায়।
ইউএস-বাংলার ২২১ ফ্লাইটের কেবিন ক্রু খাজা হোসেন মোহাম্মদ শাফির মরদেহ রাজধানীর বেগমবাজারের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হতে পারে।
এছাড়া ফয়সালকে গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হবে বলে ভাই জানিয়েছে। এদিকে আঁখিমনি ও মিনহাজ দম্পতিকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার একটি বিমান বিধ্বস্ত হলে ২৬ বাংলাদেশিসহ ৪৯ জন নিহত হন। বাংলাদেশিদের মধ্যে ২৩ জনের মরদেহ শনাক্ত করে তা আজ দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। বাকি ৩ জনের মরদেহ শনাক্ত করতে ডিএনএ টেস্টের প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে ১০ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস। রবিবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বিমান বিধ্বস্তে নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে আলিফউজ্জামান, পিয়াস রায় ও মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের লাশ এখনও শনাক্ত হয়নি।’