‘এক ঝলক দেখেই পৃথুলাকে চিনতে পারি’

‘পৃথুলাকে চিনতে আমার কোনও সমস্যা হয়নি। এক ঝলক দেখেই তাকে চিনতে পারি’-ভারাক্রান্ত কণ্ঠে এ কথা বলেন তার নানা এম এ মান্নান খান। সোমবার আর্মি স্টেডিয়াম থেকে পৃথুলার মরদেহ রাজধানীর শ্যামলীর আশা টাওয়ারে (পৃথুলার মায়ের কর্মস্থল) আনার পর স্মৃতিকাতর হয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে কো-পাইলট পৃথুলা রশিদের নানা এ কথা বলেন।

পৃথুলা রশিদের ডেথ সার্টিফিকেটনানা এম এ মান্নান খানই নেপালে গিয়েছিলেন পৃথুলা রশিদের মরদেহ শনাক্ত করতে। তিনি বলেন, ‘নেপালে গিয়ে আমি পৃথুলাকে শনাক্ত করি। চিনতে সমস্যা হয়নি। অ্যাজ ইট ইজ ছিল। শুনেছি মাথায় আঘাত পেয়েছিল। শরীরের কিছু জায়গা পুড়ে গিয়েছিল, বিশেষ করে পিঠের অংশে। এছাড়া ছোটখাটো কিছু ইনজুরি ছিল। মাথার আঘাতটা (পিছনের দিকে) ছিল গুরুতর। পৃথুলার ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে মাথায় ভোঁতা কিছুর আঘাতের কথা লেখা রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি মরদেহে প্রচুর ময়লা ছিল, ছিল কালি। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আগুন নেভানোর সময় আহত-নিহতদের ওপরে অনেক ময়লা পড়ে। এ কারণে অনেক দেহ শনাক্ত করতে সমস্যা হয়েছে।’

পৃথুলা রশিদমর্গে পৃথুলাকে সরাসরি দেখতে দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রথমে সিসিটিভির মাধ্যমে ভালোভাবে মুখ দেখানো হয়। তাতেই আমি পৃথুলাকে চিনতে পারি। আমাদের দেশের মন্ত্রী, নেপালের ডাক্তার, নার্সসহ সবাই আমাকে বলেছেন, সবার চেয়ে পৃথুলার মরদেহটাই ভালো ছিল। একটুও বিকৃত হয়নি।’

পৃথুলাকে আগারগাঁওয়ের তালতলা সরকারি কবরস্থানে তার দাদা, দাদি ও ফুপুর কবরের পাশে দাফনের কথা থাকলেও পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়। কেন এই পরিবর্তন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পৃথুলাকে দাফন করলে ২৫ বছর কবর সংরক্ষিত থাকবে, সরকারিভাবে পাওয়া এমন আশ্বাসের ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছি।’

আরও পড়ুন: শেষ দিন পৃথুলার সঙ্গে যাননি বাবা

এর আগে, নেপালে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তে নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে ২৩ জনের লাশ জানাজা শেষে সোমবার বিকালে আর্মি স্টেডিয়ামে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লাশগুলো জানাজা ও আনুষ্ঠানিকতার জন্য আর্মি স্টেডিয়ামে নিয়ে আসা হয়।

উল্লেখ্য, সোমবার (১২ মার্চ) চার ক্রু ও ৬৭ যাত্রীসহ ৭১ জন আরোহী নিয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে নেপালের স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে পৌঁছায়। অবতরণের সময় এতে আগুন ধরে যায়। এরপর বিমানবন্দরের কাছেই একটি ফুটবল মাঠে সেটি বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৯ জন। এর মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিক ২৬ জন।