নীরবে চোখের জল ফেলছেন এ্যানী

 



স্বামী-সন্তানের সঙ্গে এ্যানীস্বামী-সন্তানের কথা মনে করে হাসপাতালের বেডে নীরবে চোখের জল ফেলছেন নেপালে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় আহত আলীমুন নাহার এ্যানী। ঘটনার এক সপ্তাহ পরও তিনি জানতেন না, নেপালে বেড়াতে যাওয়ার সময় সঙ্গে থাকা তার স্বামী ফারুক হোসেন প্রিয়ক ও মেয়ে তামাররা প্রিয়ন্ময়ী বেঁচে নেই। ১৯ মার্চ মরদেহ বাংলাদেশে আসার পর কফিনে মোড়ানো দুই প্রিয় মানুষকে দেখেন এ্যানী; এর আগে কেবলই খুঁজেছেন তাদের।

১৯ মার্চ নেপাল থেকে প্রিয়ক ও প্রিয়ন্ময়ীর মরদেহ আসার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এ্যানীকে নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি গাজীপুরে। বুধবার (২১ মার্চ) আবারও হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ফিরে আসেন তিনি।

ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে সমন্বয়ক ও মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান ডা. সামন্ত লাল সেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ্যানীর ডান পায়ে ফ্র্যাকচার আছে, সঙ্গে ইনজুরিও আছে। প্রত্যেকেই সাইকোলোজিক্যাল ট্রমার মধ্যে আছে। কোনও পোড়া নেই, কিন্তু এদের যেহেতু শ্বাসনালীর ইনজুরি আছে সেহেতু অর্থোপেডিকস এবং রেসপিরেটরি মেডিসিনের চিকিৎসকদের দেখানো হবে।’

এ্যানী জানতেন তার স্বামী-সন্তানকে সিঙ্গাপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে। তিনি এখন জানেন আর তারা ফিরবেন না।

দাফন শেষে হাসপাতালে ফিরে এখন কেমন আছেন জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ) সন্ধ্যায় এ্যানীর বাবার সালাউদ্দিন মো. খসরু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাঝে মধ্যে সে (এ্যানী) সন্তান ও স্বামীর কথা স্মরণ করে নীরবে শুধু চোখের পানি মোছে, কিছু বলে না। শুধু বলে, তাদের কথা মনে পড়ে বাবা। ঠিকমতো ঘুমায় না মেয়েটা, নামাজ পড়ে, তজবি পড়ে।’

তার বাবা জানান, এ্যানীর শারীরিক অবস্থা একটু ভালো থাকলেও মানসিক অবস্থা ভালো নেই।

মেয়ের অবস্থা নিয়ে যখন কথা বলছিলেন তখন বাবা সালাউদ্দিন মো. খসরুর চোখের পানি ঝরছিল। তিনি বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে ও এক ছেলে ছিল। ছেলেটা গত বছর ১৮ আগস্ট পানিতে ডুবে মারা গেছে। এরপর এখন নাতনি ও মেয়ের স্বামী মারা গেল। তারপরও বলি, আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া, মেয়েটা বেঁচে আছে।’

তিনি জানান, এ্যানীর স্বামী প্রিয়কও ছিল তার মা-বাবার একমাত্র সন্তান। তার বাবাও মৃত, পরিবারে এখন শুধু রয়েছেন মা।

হাসপাতালে এ্যানীর পাশে আছে তার বাবাসহ ছোট বোন ইলানুর নাহার ইভা। মা নাজমা বেগম রয়েছেন বাড়িতে।

গত ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট। ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ২৬ জন বাংলাদেশিসহ ৪৯ জন। এই নিহতদের মধ্যে আছেন এ্যানীর স্বামী ও মেয়ে। মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনায় এ্যানীসহ আহত হন ১০ বাংলাদেশি।