সীমান্ত হত্যা বন্ধে নন লেথাল উইপন ব্যবহারে সম্মত বিজিবি-বিএসএফ

 বিজিবি-বিএসএফ এর মধ্যে ৪৬তম মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠক

বিজিবি-বিএসএফ যৌথ বৈঠক শেষে জানিয়েছে তারা সীমান্তে কোনও মানবাধিকার লঙ্ঘন চায় না। সেই সঙ্গে সীমান্ত হত্যা বন্ধে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীরা নন লেথাল উইপন ব্যবহার করতেও সম্মত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে পিলখানার বিজিবি সদর দফরে বিজিবি-বিএসএফ এর ডিজি পর্যায়ে ৪৬ তম সীমান্ত সম্মেলন বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। এ সময় বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলনের যৌথ আলোচনার দলিল স্বাক্ষরিত হয়। 

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম বলেন, ‘সীমান্তে প্রাণঘাতী কোনও অস্ত্রের ব্যবহার নয়, আমরা উভয় দেশ আলোচনার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। এর কারণে সীমান্ত হত্যা অনেকাংশে কমে এসেছে। সীমান্তে কোনও প্রকার প্রাণনাশ গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণে বিএসএফ নন লেথাল উইপন ব্যবহার করছে। তবে,নন লেথাল উইপন ব্যবহার করায় বিএসএফ সদস্যরা অপরাধীদের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।’

বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) মহাপরিচালক (ডিজি) কে কে শর্মা বলেন,‘সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে আমরা কাজ করছি। সাধারণত মধ্যরাতে সীমান্তে ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটিজ হয়। আমরা এগুলো নজরে আনছি। এদিকে সীমান্ত হত্যা বন্ধে নন লেথাল উইপন ব্যবহার করছি। এতে অপরাধীরা আমাদের ওপর আক্রমণ করে। তবুও আমরা নন লেথাল উইপন ব্যবহার করছি। সীমান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘন হোক, এটা আমরা চাই না।’

গত ২৩ এপ্রিল শুরু হওয়া বিজিবি ও বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে ৪৬তম সীমান্ত সম্মেলনে বিএসএফ ডিজি শ্রী কে কে শর্মার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল ও বিজিবি ডিজি সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেন। ২৭ এপ্রিল পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা আইসিপিতে যৌথভাবে জয়েন্ট রিট্রিট সেরেমনি উদ্বোধন হবে এবং একই দিন ভারতীয় প্রতিনিধিদল দেশে ফিরবেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএসএফ ডিজি বলেন, উভয় পক্ষ সীমান্তে প্রাণহানির ঘটনা শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে গবাদি পশু ও মাদক চোরাচালানপ্রবণ এলাকায় সমন্বিত যৌথ টহল পরিচালনা, সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের মাঝে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বিধি-নিষেধ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম বন্ধে যৌথ পদক্ষেপ গ্রহণে সম্মত হয়েছি।

দেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সময় ভারতের অংশে কিছু রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছিল এবং তাদের বিএসএফ বাংলাদেশে পুশব্যাক করে বলে শোনা গেছে। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিজিবি ডিজি বলেন, ‘বহিরাগত নাগরিকদের অবৈধভাবে সীমান্ত পার হওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের কাজে লাগিয়ে কোনও স্বার্থান্বেষী মহল যেন কোনও কিছু করতে না পারে সে বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি।’

নির্বাচনকে সামনে রেখে সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র অনুপ্রবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবারের সম্মেলনে এটা আলোচ্য বিষয় ছিল না।

সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ফেনসিডিল প্রবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসএফ ডিজি কে কে শর্মা বলেন, "ফেনসিডিল ভারতে নিষিদ্ধ, বৈধভাবে ফেনসিডিল উৎপাদন হয় না। এ বিষয়ে আমাদের নজরদারি এবং অভিযানে অব্যাহত রয়েছে। গত বছর প্রায় ৫ লাখ ৭০ হাজার বোতল ফেনসিডিলসহ বিপুল পরিমাণ অন্যান্য মাদক আটক করা হয়েছে। ফেনসিডিলসহ বাংলাদেশে যে কোন মাদক প্রবেশ ঠেকাতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।"

ফেলানী হত্যার বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবি ডিজি বলেন, বিষয়টি ভারতীয় আদালতে বিচারাধীন, এ বিষয়ে কোনও কথা না বলাই উত্তম।

এছাড়াও আন্তঃসীমান্তে অপরাধপ্রবণ এলাকার ম্যাপিং বছরে দুইবার হালনাগাদ করা হবে বলেও জানানো হয়। উভয় বাহিনী সীমান্তে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে যৌথভাবে কাজ করতে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।