মন্ত্রী-সচিবদের ফোন কিনতে লাগবে কোটি টাকার বেশি, বিল সীমাহীন

সরকারি ‘টেলিফোন, সেলুলার, ফ্যাক্স ও ইন্টারনেট নীতিমালা ২০১৮’ অনুযায়ী দেশের মোট ১৩৭ জন মন্ত্রী ও সচিবের জন্য অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেট কিনতে সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় হবে কোটি টাকারও বেশি। এ সব মোবাইল ফোনের বিল বাবদ সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় হবে সীমাহীন অর্থ। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে আলাপকালে এই তথ্য জানা গেছে।

সোমবার (২১ মে) মন্ত্রিপরিষদের নিয়মিত সভায় অনুমোদিত নীতিমালার আলোকে এখন থেকে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সচিবরা প্রত্যেকে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন সেট কেনার জন্য ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পাবেন। এর আগে তারা ১৫ হাজার টাকা করে পেতেন। একটা মানসম্মত অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেট কিনতে ৭৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। এর নিচে মানসম্মত ফোন পাওয়া যায় না। তাই প্রত্যেকের জন্য মোবাইল ফোন সেট কিনতে ৭৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি নীতিমালায় বলা হয়েছে।

এছাড়া এই সব মোবাইল বিলের ক্ষেত্রে কোনও সীমা দেওয়া হয়নি। সরকারের এই ১৩৭ জন কর্মকর্তা কথা বলতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সীমাহীন অর্থ বরাদ্দ পাবেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া তালিকা অনুযায়ী এই মুহূর্তে সরকারের প্রশাসনে সিনিয়র সচিব ৮ জন। সচিব ও সচিবের পদমর্যদায় কর্মকর্তার সংখ্যা ৭০ জনসহ মোট ৭৮ জন। এদিকে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্যমতে সরকারে প্রধানমন্ত্রী একজন, মন্ত্রীর পদমর্যদায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ১ জন, উপদেষ্টা ৫ জন। সরকারের পূর্ণমন্ত্রী ৩৩ জন। প্রতিমন্ত্রী ১৭ জন। উপমন্ত্রী দুই জনসহ মোট ৫৯ জন। সরকারের মন্ত্রী ও সচিব মিলে মোট ১৩৭ জন কর্মকর্তার জন্য ৭৫ হাজার টাকা দরে ১৩৭টি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেট কিনতে সরকারি কোষাগার থেকে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। তবে এর সঙ্গে বিচারপতিরা যুক্ত হলে এ ব্যয় আরও বাড়বে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘‘মন্ত্রিপরিষদের সভায় ‘সরকারি টেলিফোন, সেলুলার, ফ্যাক্স ও ইন্টারনেট নীতিমালা ২০১৮’-এর খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। এই নীতিমালার আলোকে এখন থেকে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সচিব অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেট কেনার জন্য ৭৫ হাজার টাকা পাবেন। এর আগে তারা ১৫ হাজার টাকা করে পেতেন। একটা মানসম্মত অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল হ্যান্ডসেট কিনতে ৭৫ হাজার টাকা লাগে। এর নিচে মানসম্মত ফোন পাওয়া যায় না। এছাড়া তাদের মোবাইল বিলের ক্ষেত্রে কোনও সীমা দেওয়া নাই। তারা যত টাকার কথা বলবেন, সরকারের কোষাগার থেকে বিল বাবদ তত টাকাই বরাদ্দ দেওয়া হবে।’ 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এই নীতিমালা আলোকে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরাও এই সুবিধা পাবেন। এই নীতিমালায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা রয়েছে।’

জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টিতে আমরা অবাক হইনি। যারা সুবিধা নিয়েছেন, তারাই তাদের জন্য এই নিয়মটি করেছেন। বাংলাদেশের জন্য যা খুবই স্বাভাবিক। তবে এর ভিন্নতাও হতে পারতো। যেমন সরকারের কোষাগারের টাকা মানে জনগণের টাকা। জনগণের টাকায় দামি মোবাইল ফোন সেট না নিয়ে একটা উদাহরণ স্থাপন করা যেতো। কিন্তু উদাহরণ তো সৃষ্টি হয়েছে। আর তা হলো জনগণের টাকায় দামি মোবাইল ফোন সেট ব্যবহার করা আর সীমাহীন বিল পরিশোধ করা।’