‘কোটা ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে বিতর্কিত আইনের ব্যবহার করছে সরকার’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সংবাদ সম্মেলনে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন

কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সরকার বিতর্কিত তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন।

কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে গ্রেফতার হওয়া শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে রবিবার (১৯ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। সম্মেলনটির আয়োজন করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।

জয়নুল আবেদীন বলেছেন, তথ্য-প্রযুক্তি আইনটি একটি বিতর্কিত আইন। এই আইনকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে সরকার।

তিনি দাবি জানিয়ে বলেন, মুসলমানরা পরিবারের সঙ্গে ঈদুল আজহা উদযাপন করেন। অথচ ন্যায্য আন্দোলন করতে গিয়ে বহু ছাত্রছাত্রী গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছে। অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এটা খুবই অমানবিক। তাই এসব শিক্ষার্থীকে দ্রুত মুক্তি দিতে হবে এবং মামলা বাতিল করতে হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে। ভারতে আদালতে এক রিট আবেদনের মাধ্যমে এই ধরনের ধারা বাতিল করা হয়েছে। আমাদের আদালতেও এই ধারা বাতিল চেয়ে একটি রিট মামলা চলছে। অথচ তা সত্ত্বেও আইনটি প্রয়োগ করা হচ্ছে।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এ আইনটি করার সময় আমাদের, আপনাদের আপত্তি ছিল। তখন বলেছিলাম, এই আইনের অপপ্রয়োগ হবে। এখন ঠিকই তা-ই হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক ছিল বলে আমরা মনে করি। সরকারও এর যৌক্তিকতা স্বীকার করেছে। যেসব ছাত্রছাত্রী এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিল তারা কোনও রাজনৈতিক দলের লেজুড়ভিত্তিক অঙ্গসংগঠনের সদস্য ছিল না। তবু জামায়াত-বিএনপিকে জড়িয়ে এই আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সরকার নানা কৌশল অবলম্বন করেছে। নামে-বেনামে অনেক মামলা মোকদ্দমা দায়ের করেছে, আন্দোলনকারীদের গণগ্রেফতারের মূল লক্ষ্যে পরিণত করেছে।

জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা দেখেছি হেলমেটধারী সন্ত্রাসীরা ছাত্রছাত্রী ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের গ্রেফতার করা হলেও আন্দোলনকারীদের ওপর সহিংসতা চালানোর দায়ে কারও বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং অনলাইন জগতে কড়া নজরদারি চালাচ্ছে। সরকার দুটি আন্দোলনের যৌক্তিকতা স্বীকার করলেও কেন হাজার হাজার অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেছে, তা বোধগম্য নয়।

ওই আন্দোলনে ছাত্রলীগ-যুবলীগ এবং পুলিশের অতিরিক্ত বল প্রয়োগের তীব্র নিন্দা জানান জয়নুল আবেদীন।

এই সহিংসতায় ছাত্রলীগের ভূমিকা এবং হেলমেটধারীদের বিষয়ে ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে সংবাদ সম্মেলনে দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, কোষাধ্যক্ষ নাসরিন আক্তার, সিনিয়র সহ-সম্পাদক কাজী জয়নাল আবেদীন প্রমুখ।