ফাঁকা ঢাকায় কড়া নিরাপত্তা

সিসিটিভিতে মনিটর করা হবে ঢাকার বিভিন্ন সড়ক

ঈদের ছুটিতে প্রায় ফাঁকা হয়ে যাওয়া ঢাকা শহরের ঈদ জামাতগুলোকে কেন্দ্র করে কড়া নিরাপত্তা জোরদার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এছাড়াও নগরে চুরি-ছিনতাই ঠেকাতে পুলিশি তল্লাশি-চৌকি এবং সাদা পোশাকে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে বুধবার (২২ আগস্ট) সকালে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান এবং বায়তুল মোকাররম মসজিদের ঈদের জামাতকে কেন্দ্র করেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মুসল্লিদের নিরাপত্তার স্বার্থে ঈদের জামাতের প্রবেশ গেটগুলোতে আর্চওয়ের মাধ্যমে তল্লাশি করা হবে বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ‘ঈদের সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যাতে কোনও ছিনতাই-চুরিসহ অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য পুলিশের সব ইউনিট সমন্বিতভাবে কাজ করছে। বাসা-বাড়িতে যাতে কোনও চুরি-ডাকাতি সংঘটিত হতে না পারে সে বিষয়ে আমরা নজরদারি করছি। রাজধানীর প্রতিটি পয়েন্টে থাকবে পুলিশের তল্লাশি-চৌকি। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকার মোড়ে মোড়ে থাকবে টহল পুলিশের টিম। ঈদের ছুটিতে জনমানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে অনেক পুলিশ সদস্যদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।’

কমিশনার বলেন, ‘রাজধানীর প্রতিটি ঈদ জামাতেই পুলিশের নিরাপত্তা থাকবে। জাতীয় ঈদগাহ ও জাতীয় মসজিদে ঈদ জামাতে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। মুসল্লিদের জায়নামাজ ছাড়া কোনও ধরনের ব্যাগ ও দাহ্য পদার্থ নিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। তবে বৃষ্টি হলে ছাতা সঙ্গে আনা যাবে। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার স্বার্থে জায়নামাজ ও ছাতা তল্লাশি করা হবে।’

যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত ডগ স্কোয়াড

ডিএমপি সূত্র জানায়, ডিএমপির ডগ স্কোয়াড কে-৯ ইউনিট এবং বোম্ব-ডিসপোজাল ইউনিট দিয়ে জাতীয় ঈদগাহে সুইপিং করা হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের চারপাশে এবং বায়তুল মোকাররম মসজিদের আশেপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ঈদগাহ মাঠের পাশে পুলিশের কন্ট্রোল রুম বসিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়া সন্দেহভাজন কাউকে পেলেও পুলিশ তল্লাশি করে মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করে জঙ্গি বা সন্ত্রাসবাদী কোনও সংগঠনের সুনির্দিষ্ট কোনও হুমকি নেই। তবু জঙ্গি প্রতিরোধে গঠিত বিশেষায়িত কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সোয়াট টিম ও বোম্ব ডিসপোজাল টিম স্ট্যান্ডবাই রাখা হবে। যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে দ্রুত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়। এছাড়া ঈদগাহ ময়দান ও বায়তুল মোকাররম মসজিদের ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় নজরদারির জন্য সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক গোয়েন্দা মোতায়েন রাখা হবে।

ঈদের জামাত নির্বিঘ্ন করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনে পুলিশ কর্মকর্তারা

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদ উদযাপন করতে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া বাসিন্দাদের ফাঁকা বাসায় যাতে চুরি-ডাকাতি না ঘটে সেজন্য প্রতিটি এলাকায় পুলিশের মোবাইল টিম বাড়ানো হয়েছে। ফুট পেট্রোলের পাশাপাশি, মোটরবাইক টহল এবং ভেহিক্যাল পেট্রোলও বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যানবাহন তল্লাশির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ফাঁকা ঢাকায় যাতে যানবাহন দ্রুতগতিতে চলতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার না হয় সেজন্য ব্যরিকেড দিয়ে গতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইব্রাহীম খাঁন বলেন, ‘আমরা ঈদকেন্দ্রীক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আগেই বিভিন্ন আর্থিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীদের সবসময় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার কথা বলেছি। বিভিন্ন এলাকায় আমাদের টহল ও চেকপোস্ট বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া এলাকাভিত্তিক বিট পুলিশ কর্মকর্তাদের নিজ নিজ এলাকায় টহলের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।’

মাঠে থাকবে র‌্যঅব, সোয়াটসহ বিশেষ টিম

ডিএমপির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ঈদকেন্দ্রীক ফাঁকা সড়কের অনেকেই ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। ছিনতাইকারীরা একা কাউকে পেলে ছিনতাই করতে পারে। এজন্য পুরো রাজধানীতে সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা মাঠে থাকবে। অনেক সময় ফাঁকা রাজধানীতে বাসা বদলের নামে ডাকাতি করা হয়। এজন্য ফাঁকা বাড়িতে কেউ বাসা বদলের নামে মালামাল ট্রাক বা ভ্যানে মালামাল উঠাতে দেখলে কাছের থানা পুলিশকে জানাতে বলা হয়েছে।

এদিকে র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে ফাঁকা শহরের বিভিন্ন এলাকা এবং ঈদ জামাতের নিরাপত্তার জন্য ঢাকার পাঁচটি ব্যাটালিয়ান নিয়োজিত রয়েছে। র‌্যাবের ডগ স্কোয়াড ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি পোশাকে এবং সাদা পোশাকে টহল, চেকপোস্টের মাধ্যমে নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে র‌্যাব।’