সৌদি থেকে নারী শ্রমিকদের দেশে ফেরার আকুতি (ভিডিও)








বিমানবন্দরে সৌদি আরব থেকে ফিরে আসা নারী শ্রমিক (ফাইল ছবি)

সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে ভিডিওবার্তা পাঠিয়েছেন ৫০ নারী শ্রমিক। তাদের প্রায় সবারই অভিযোগ নির্যাতন করে আটকে রাখার। তবে সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস বলছে, তারা নিয়োগকারী কোম্পানির তত্ত্বাবধায়নেই আছে। তারা কবে দেশে ফিরতে পারবেন তা সৌদি সরকারের ওপর নির্ভর করছে।

ভিডিওবার্তায় দেখা যায়, কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকা কয়েকজন নারী আকুতি জানিয়ে তাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন। তাদের একজনের ভাষ্য, ‘একটা সুস্থ মানুষরে যদি পায়ের ভেতর পেরেক ঢোকানো হয় তাহলে তার অবস্থা কেমন হইতে পারে? সুস্থ মানুষরে যদি মাথায় কারেন্ট দিয়া শক দেয় তাইলে সেই মানুষটা কেমন হইতে পারে? একটা সুস্থ মানুষরে যদি মরিচ চাবায়ে খাওয়ায় তাইলে কেমন লাগে?’ এ সময় অন্য নারীরা বলেন, ‘আমরা সৌদি আরবের রিয়াদে আছি।’ আরেকজন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ, আমাদের মা-বইনরে ইজ্জতমতো যেন বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেন।’ অন্য এক নারী বলেন, ‘শেখ হাসিনা আমাদের বিপদ থেইক্কা উদ্ধার করেন। আমরা অনেক বিপদের মধ্যে আছি। আমাদের জীবন ভিক্ষা দেন, আমাদের প্রাণ ভিক্ষা দেন।’


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সৌদি আরবের রিয়াদে মাহারা হিউম্যান রিসোর্স কোম্পানির একটি সেফহোমে ৫০ জন বাংলাদেশি নারী শ্রমিক দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। কোম্পানির মাধ্যমে সেদেশে যাওয়ায় তাদের সেই মাহারা হিউম্যান রিসোর্স কোম্পানির হেফাজতেই রাখা হয়েছে। তবে তাদের অভিযোগ, এর আগে যেখানে তারা কাজ করেছেন, সেখানে অনেককেই মালিকের কাছে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
রিয়াদে আটকে থাকা ৫০ নারীর একজন সাবিনা। তার স্বামী শফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে দু’দিন আগেই। তিনি বলেন, ‘আমার বউয়ের সেখানে খাবারের অনেক কষ্ট হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ান মালিকের সেফহোমে আছে। সেখানে সেদ্ধ ডিম, সাদা ভাত, সেদ্ধ মুরগি খেতে দেওয়া হয়। কিন্তু এই খাবারে তাদের হচ্ছে না। আগে কখনও খাওয়ার অভ্যাস নাই তো। আর অনেকদিন ধরে একজায়গায় আছে। একধরনের ভয় পাচ্ছে যে ধরে এনে আবার আরেক কোম্পানির কাছে দিয়ে দেওয়া হলো কিনা। তার সঙ্গে সেখানে ৫০ জন নারী আরও আছে। কবে দেশে আসবে তারা কেউ জানে না।’
এই নারী শ্রমিকদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সৌদি আরবের রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার কাউন্সেলর সারওয়ার আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জানি। তারা আমাদের সেফহোমে ছিল। আমরা ঈদের সময় তো ছুটিতে ছিলাম। তো সৌদি কর্তৃপক্ষকে বলেছিলাম যে, তাদের মাধ্যমেই তো দেশে পাঠাতে হয়, তাই তাদের সেফহোমের মাধ্যমে পাঠাতে। তো সেখানে অন্যান্য দেশের মেয়েরাও থাকে, তাদের জায়গা ছিল। তারাই এই ব্যবস্থা করেছে আলাদা একটি গেস্ট হাউজে।’ তিনি বলেন, ‘তাদের রায় হয়ে গেছে, এখন এক্সিট হবে, চলে যাবেন তারা। সৌদি ডিপোর্টেশন তাদের পর্যায়ক্রমে পাঠিয়ে দেবে। আমাদের এখানে হয়তো ভাত খেতো, তাদের ওখানে ভাত পায় না। এই কারণেই হয়তো তারা দেশে ফেরার জন্য অস্থির হয়ে গেছে। টেলিফোন ব্যবহারসহ অন্যান্য স্বাধীনতা আমাদের এখান থেকে একটু কম, তাই হয়তো এরকম করছে।’
সারওয়ার আলম বলেন, ‘তাদের ফিরে যাওয়ার সময়টা সেভাবে বলা মুশকিল। কারণ, সৌদি কর্তৃপক্ষ তাদের এক্সিট দেবে, ফ্লাইট পাওয়ার একটা ব্যাপার আছে। এর ওপর এখন ফিরতি হজ ফ্লাইটের সময়। তাই একটু সময় তো লাগবেই।’
এদিকে এই কোম্পানির জিম্মায় থাকা ৫০ নারী শ্রমিকের মধ্যে ৩৭ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স বোর্ডে আবেদন করেছে ব্র্যাক।
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কাছে এই ৩৭ জন নারীর পরিবারের পক্ষ থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেছে। আমরা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি এই ৩৭ জনকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য।’