‘নারীদের সমতা প্রতিষ্ঠায় ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে হবে’





IMG_20181015_144427_HDR

ডিজিটাল জ্ঞানের যদি ধারণা না পায় নারীরা তাহলে অনেকটা বৈষম্যের শিকার হবেন। নারীদের সমতা প্রতিষ্ঠায় শুধু পড়ালেখা করলে হবে না, সম কাজে সমমজুরি নিলেই হবে না, তাকে ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে হবে।

সোমবার ( ১৫ অক্টোবর) ‘আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এসব কথা বলেন।
উইমেন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ ডব্লিউজেএনবি এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন যৌথভাবে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
হাসানুল হক ইনু বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হলে তবেই নারীরা সমতার ভিত্তিতে লড়াইটা করতে পারবেন, মর্যাদা পাবেন। সেজন্য আমি ডিজিটাল গ্রামটাকে আমাদের একটা ক্ষেত্র বলছি।
তিনি বলেন, ‘প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ নারী গ্রামের গণমাধ্যমে আছে, কিন্তু উপজেলার হিসাব আমার এই মুহূর্তে জানা নেই, সেখান থেকেও বিভিন্ন পত্রিকা বের হয়। আবার অনেক অনলাইন গণমাধ্যম আছে, সেখানেও নারীদের সম্পৃক্ততা আছে। একটা গ্রামীণ গণমাধ্যমের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে, যেখানে মেয়েরা কাজ করছে। মুক্তিযুদ্ধেও নারীর ভূমিকা ছিল। সুতরাং আমি যখন গ্রামীণ নারীর ভূমিকা বিশ্লেষণ করবো, আমি আপনারা যারা বিশ্লেষণ করেন, গবেষণা করেন, তাদের প্রতি আহ্বান জানাবো, ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধ, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিত্ব, গ্রামীণ অর্থনীতিতে কীভাবে কৃষি কাজে ও অকৃষি কাজে এবং কুটিরশিল্প, ক্ষুদ্রশিল্প, গ্রামীণ শিল্প, ডিজিটাল গ্রামীণ সমাজে কীভাবে নারীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে, তা তুলে ধরুন।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যদি সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করতে হয় তাহলে চারটি সম্পদের বাজারে ক্ষমতা কাঠামোতে এবং মানব উন্নয়নে নারীর প্রবেশগম্যটাকে নিশ্চিত করার মধ্যে দিয়ে আমি বাংলাদেশে বৈষম্যমুক্ত সমাজ তৈরি করতে পারি। সেজন্য আমাদের আবার চার নীতির ওপর দাঁড়াতে হবে, যেই চার নীতি জেনারেল জিয়াউর রহমান সামরিক শাসনের জোরে বাদ দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা আবার সংসদে আইনে পাস করে আবার সংবিধানে পুনঃস্থাপন করেছে। সেই সংবিধানের একটা নীতি সমাজতন্ত্র। এই সমাজতন্ত্র শব্দটা ইদানীংকালের আমাদের জ্ঞানী লোকজন ব্যবহার করেন না। সারাক্ষণ গণতন্ত্র নিয়ে ধিক্কার করেন। এই যে ১০টি বাজেট শেখ হাসিনা দিয়েছেন, সমাজতন্ত্রের চার নীতি অনুসরণ করেছেন বলেই ঝট করে দারিদ্র্য কমে গেছে, সমৃদ্ধি বেড়েছে। কিন্তু বৈষম্য আবার উনি কমাতে পারেননি। সুতরাং নারীর যদি সমতা চান, সংবিধানের চার নীতি সমাজতন্ত্র করে শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে। তবেই কেবল নারীর সমতার সমাজ তৈরি করা যাবে।’

অনুষ্ঠানের সভাপতি এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘জাতিসংঘ আজকের দিনটাকে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিল বলেই আজকে আমরা গ্রামীণ নারীদের নিয়ে ভাবতে বসেছি। আসলে সারা বছর কি আমরা সেটা ভাবি? আমি যেহেতু গণমাধ্যমের পাঠক, গণমাধ্যমের কথাই বলবো। আমরা কিন্তু গণমাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের যে কষ্ট, সংগ্রাম, তাদের শ্রম, শ্রমের মর্যাদা, মূল্যায়ন সেভাবে আলোচনায় আসতে দেখি না। আমাদের যাত্রা কিন্তু গ্রাম থেকেই এবং এখনও আমরা যখন গ্রামে যাই তখন দেখি প্রতিটা মানুষ কীভাবে পরিশ্রম করছেন। গ্রামের যে বিষয়টি, বাড়ির পাশে গাছপালা লাগানো এবং বছরের পর বছর বীজ সংরক্ষণ করা—এসব কিন্তু গ্রামীণ নারীই করেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যখন গভীর রাতে কাজ করে বাড়ি ফিরি তখন কিন্তু রাস্তায় দেখি পুলিশের পাশাপাশি মেয়েরাও রাত অবধি কাজ করছেন। অনেক সময় আমাদের মিডিয়া হাউসগুলো নারীদের নিতে চায় না এই ভেবে যে তাদের নিরাপত্তা কে দেবে। সেগুলো ভাবার সময় এসেছে আমাদের, আমাদের দায়িত্ব আমরা নিজেরাই নিতে জানি। গ্রামীণ নারী যখন জানেন, আমরা একজন শিক্ষিত নারী, আমরা কেন পারবো না? সুতরাং নারীর নিরাপত্তা কে দেবে—এসব বিষয় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আর নারী-পুরুষ সবাই একই ধরনের কাজ করতে পারে, এটা কিন্তু আমাদের সমাজে স্বীকৃত।’

বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন নারীর ক্ষমতায়ন। সবার ক্ষমতায়ন যার যার জায়গা থেকে দেখতে হবে। গ্রামীণ নারীদের কাজের মূল্যায়ন বিশ্বজুড়ে করা হয়, শুধু বাংলাদেশ একা নয়। বিশ্বের ৬০ শতাংশ খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত গ্রামীণ নারী। তারা তাহলে আড়ালে থেকে যাচ্ছে কেন? আমাদের সংস্থা নারীদের প্রতি সহিংসতা নিয়ে কাজ করছে। নারীদের বড় সম্মান নিজ ঘরে, নারীর প্রতি সম্মান করলে সহিংসতা কমতো। বিবিএসের সার্ভে বলছে, ৭৫-৮০ শতাংশ নারী কোনও না কোনোভাবে পারিবারিক সহিংসতার শিকার। নারীরা নিজেদের বাড়িতেই নিরাপদ নন। গুরুতর আহত কিংবা মৃত্যু না হলে আমরা জানতে পারি না। এটা কমানোর জন্য আমরা নানাভাবে কাজ করছি। নারীর মর্যাদা সংসারে, এ অবস্থানে আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে। সমাজের যে ধ্যান-ধারণা সেটায় বড় পরিবর্তন আনতে হবে। আর তা আনতে হলে নারীদের সব অবদানের স্বীকৃতি দিতে হবে।’
আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন বেসরকারি টিভি চ্যানেল নিউজ ২৪-এর যুগ্ম বার্তা সম্পাদক আঙ্গুর নাহার মন্টি। অর্থনীতিতে গ্রামীণ নারীর অবদান নিয়ে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন নিউজ ২৪-এর প্রধান বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুন্নী।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক শাহ্ আলমগীর, দৈনিক আমাদের অর্থনীতির সম্পাদক নাসিমা খান মন্টি, চ্যানেল আই অনলাইনের ইনপুট এডিটর ফাহমিদা আখতার, বৈশাখী টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার রিতা নাহার প্রমুখ।