সিলেট থেকে কী জানান দেবে ঐক্যফ্রন্ট?






সিলেট ১

আগামীকাল বুধবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে সিলেট মহানগরীর জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম সাংগঠনিক সমাবেশ। এ সমাবেশ ঘিরে এ-সংক্রান্ত সব ধরনের প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে জোর কদমে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিপরীত রাজনৈতিক শক্তির এই সমাবেশ থেকে নতুন রাজনৈতিক পথ-পরিক্রমা কতটা সৃষ্টি হবে এবং আগামী নির্বাচনের আগে দাবি আদায়ে কী ধরনের বার্তা দেওয়া হবে, তা নিয়ে নীরব জিজ্ঞাসা রয়েছে জনমনে।
ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলছেন, বিএনপি, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম এ সমাবেশে রাজনৈতিক বক্তব্যই উঠে আসবে নেতাদের কণ্ঠে। মূলত আগামী কয়েকদিনের মধ্যে চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে সমাবেশ থাকায় প্রথম সমাবেশে নেতারা দাবি আদায়ে আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তার দিকটি তুলে ধরবেন। এক্ষেত্রে নতুন কোনও বার্তা দেওয়ার তেমন কোনও প্রয়োজন পড়ছে না।
ফ্রন্টের নেতারা মনে করছেন, এই প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের বিপরীত রাজনৈতিক শক্তির সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ড. কামাল হোসেন। তিনি ক্ষমতাসীন দলটির সাবেক সাংসদ ও মন্ত্রী। আওয়ামী লীগের বিপরীতে যে রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটছে, এতে সামনের সারিতে আছেন তিনি। তার এই অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে গুণগত রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা অনেক বেশি প্রবল বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কেউ কেউ। বুধবারের সমাবেশের মধ্য দিয়ে এই গুণগত পরিবর্তনের সূচনা হবে বলে মতও দেন অনেকে।
গত ১৩ অক্টোবর সাত দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য জানানোর মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে জাতীয় ঐকফ্রন্টের।

মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ড. কামাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, সময়মতো হোক, সবার অংশগ্রহণে হোক। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে যা যা করণীয়, তার ব্যবস্থা করা হোক, এটাই আমাদের বক্তব্যে ওঠে আসবে।’

ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বক্তব্য আমরা ইতোমধ্যে বলেছি। এগুলোই আসবে ঘুরেফিরে। নেতারা কথা বলবেন।’
সমাবেশস্থলে চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয় কমিটির সমন্বয়ক মনিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ফ্রন্টের নেতারা পর্যায়ক্রমে বক্তব্য দেবেন। জোটের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যরা বক্তব্য দেবেন। এর বাইরে প্রত্যেক দলের পক্ষ থেকে একজন করে বক্তব্য দেবেন।’
তবে স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করছেন, বুধবারের সমাবেশের মধ্য দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জনগণের দাবিকে সামনে রেখে আন্দোলনের শুভ সূচনা হবে।
সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আহাদ খান জামাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাধারণ মানুষ ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশকে ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এই ফ্রন্ট আরও সম্প্রসারণ হবে। আগামী দিনে মাঠে থাকতে হবে। সিলেট থেকে এর যাত্রা শুরু হলো। এই ফ্রন্টের মূল লক্ষ্য আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করতে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা।’
আহাদ খান জামাল এও বলেন, ‘আন্দোলন মানেই জ্বালাও-পোড়াও নয়, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারকে দাবি আদায়ে বাধ্য করা হবে।’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যখন আহাদ খান এসব কথা বলছিলেন, একইসময়ে পাশ থেকে জেলা বিএনপির সহসভাপতি ফরহাদ চৌধুরী শামীম বলেন, ‘সময় বলে দেবে আন্দোলনের ভাষা ও চরিত্র কী হবে।’
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুনাজ্জির সুজন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ডাকা সমাবেশে অংশ নিতে সিলেট মহানগরীসহ আশেপাশের এলাকা থেকেও নেতাকর্মীরা আসবেন। জাতীয় নেতৃবৃন্দ যে নির্দেশনা দেবেন, সে নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করবে ফ্রন্টের স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ।’
মঙ্গলবার সরেজমিনে বিভিন্ন নেতাদের পোস্টারে নির্বাচনের প্রতি স্থানীয় নেতাদের মনোযোগের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। সমাবেশস্থলের আশেপাশে সাঁটানো হয়েছে নির্বাচনি পোস্টার। জানান দেওয়া হচ্ছে প্রার্থিতার বিষয়টি।
দেওয়ালে দেওয়ালে প্রচার

সিলেট-১ আসন থেকে নির্বাচন করার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ সফল করার আহ্বান জানিয়ে পোস্টার করেছেন মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী। পোস্টার লাগিয়ে সিলেট-৬ আসন থেকে নির্বাচনের প্রত্যাশা জানিয়েছেন ফয়সল আহমদ চৌধুরী। পোস্টারে জানিয়েছেন, এই আসনে তিনি বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বুধবার ভোরে বিমানে ঢাকা থেকে সিলেটে আসবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না এবং মির্জা আব্বাস।
শায়রুল কবিরের ভাষ্য, ‘সিলেটে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ শুরু হবে।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একটি সূত্র জানিয়েছে, সমাবেশে জামায়াত ছাড়া ২০ দলীয় জোটের বাকি দলগুলোর কয়েকজন শীর্ষ নেতা অংশ নিতে পারেন। তবে কোনও পক্ষ থেকেই বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করা হয়নি।