'জঙ্গিরা গণতন্ত্র ও নির্বাচনকে ঘৃণা করে'

‘উগ্রবাদ-সহিংসতা প্রতিরোধে তরুণদের সম্পৃক্ততা’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপআসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় যেকোনও ধরনের জঙ্গি হামলা দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত আছে উল্লেখ করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘জঙ্গিরা গণতন্ত্র ও নির্বাচনকে ঘৃণা করে। তাই নির্বাচনের সময় এ ধরনের হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে আমরা এ ব্যাপারে প্রস্তুত আছি। যেকোনও ধরনের হামলা দমন করা হবে।’

শুক্রবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসি আয়োজিত ‘উগ্রবাদ-সহিংসতা প্রতিরোধে তরুণদের সম্পৃক্ততা’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মানুষের সচেতনতা বেড়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতাও বেড়েছে উল্লেখ করে সংলাপের প্রধান অতিথি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে আমাদের নানাবিধ প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোপূর্বে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এর ফলে জঙ্গি সংগঠনগুলোর অপারেশনাল ক্যাপাসিটি অনেক কমে গেছে। তবু জঙ্গিবাদ তাদের মগজে এখনও রয়েছে। তারা নির্বাচনকে ঘৃণা করে, গণতন্ত্রকে ঘৃণা করে। তাই কেউ যাতে নির্বাচনকেন্দ্রিক কোনও সহিংসতা করতে না পারে সেজন্য আমাদের প্রস্তুতি আছে।’

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা নেই, তবে এতে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কারণ নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক রয়েছে বলেও জানান তিনি।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করছি। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে এবং নির্বাচনি পরিবেশ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন আইনি পদক্ষেপ অব্যাহত রয়েছে। কেউ ফৌজদারি অপরাধে লিপ্ত না হলে এবং নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন না হলে কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। কথা দিচ্ছি, শুধু ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হলেই আমরা আইন প্রয়োগে বাধ্য হবো।’

গত বুধবার (১৪ নভেম্বর) নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সহিংস ঘটনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনি আচরণবিধি অনুযায়ী মিছিল-সমাবেশ করে মনোনয়ন ফরম উত্তলন বা জমা দেওয়ার সুযোগ নেই। যেকোনও অবৈধ সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার সক্ষমতা ডিএমপির ছিল। বড়সড় সমাবেশ ডিসপ্যাচ (ছত্রভঙ্গ) করার আমাদের যে সক্ষমতা, বিশ্বজুড়ে তার সুনাম রয়েছে। সেদিন আমরা শক্তি প্রয়োগ করতে চাইলে সেটা মেটার অব মিনিটের ব্যাপার ছিল। কিন্তু আমরা তা না করে তাদের অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তারা হেলমেটসহ লাঠিসোটা নিয়ে পুলিশকে আক্রমণ করে। এত লাঠি তো আর মাটির নিচ থেকে আসেনি। পুলিশের দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং পুলিশের গাড়ির ওপর উঠে যে লাফালাফির দৃশ্য আপনারা দেখেছেন, এটি কোনোভাবেই আইনি কর্মকাণ্ড নয়।’

তিনি বলেন, ‘সেখানে অনেক মানুষ ছিল, কিন্তু যারা সুনির্দিষ্টভাবে হামলায় জড়িত ছিল ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। শুধু তাদের কেন্দ্র করেই তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিনা কারণে কাউকে এই মামলায় আসামি করা হয়নি।’

সংলাপের সভাপতি ও ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘সহিংস উগ্রবাদী কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশে বারবারই ব্যবহার করা হচ্ছে তরুণ সমাজকে। নানা কৌশলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, বেকারত্ব ও হতাশাকে পুঁজি করে তরুণদের লোভের বশবর্তী করে অথবা ধর্মের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে সহিংসতামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত করা হচ্ছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাতে আমাদের তরুণ-কিশোরদের সহিংস কর্মকাণ্ডে লিপ্ত না করা হয় তার জন্য সব রাজনৈতিক দলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খেয়াল রাখতে হবে তরুণরা যাতে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে যুক্ত না হয়। এই এটা করতে গিয়ে অযথা যেন কাউকে হয়রানি করা না হয়।’

সংলাপে বাংলা ট্রিবিউনের হেড অব নিউজ হারুন উর রশীদ বলেন, ‘জঙ্গিবাদ যতটা না প্রকাশ্যে ততটা মানুষের মগজে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রকাশ্যে তাদের দমন করে। তবে আমাদের প্রয়োজন মানসিক পরিবর্তন। বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে জঙ্গি ধরা, বিচার করা এটিও একটি প্রতিরোধ। তবে জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে সামাজিক প্রতিরোধই সবচেয়ে বড় বিষয়।'

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ফারহানা বেগম, তরুণ উদ্যোক্তা ও ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার মাহবুব মজুমদার, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকার কবির বকুল, ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল অধ্যাপক মো. আলমগীর রহমান, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক আবু রইস এবং গবেষক ড. এস এম মোর্শেদ প্রমুখ। এছাড়াও সংলাপে সমাজের নানা শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন মাদ্রাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।