নির্বাচনে ফেক নিউজের ব্যবহার বাড়ার আশঙ্কা





ফেক নিউজআসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেক নিউজের (ভুয়া খবর) ব্যবহার একটি নতুন সংযোজন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের আশঙ্কা, এসব ভুয়া খবর সবাইকে প্রভাবিত না করতে পারলেও জনগণের বড় একটি অংশকে সন্দিহান করে তুলতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হলো এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আপাতদৃষ্টিতে আগ্রহ চোখে পড়ছে না। তাদের নিয়ন্ত্রণমূলক ক্ষমতা, প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা এবং দক্ষ জনবলও নেই।

২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেক নিউজের বহুল ব্যবহার দেখা যায়। তখন এ বিষয়টি গুরুত্ব নিয়ে সামনে চলে আসে। ভুয়া খবরের মাধ্যমে শুধু নির্বাচনেই নয়, অন্য সময়ও জনমত পরিবর্তন করা সম্ভব— এমন মনোভাব থেকে অনেক দেশেই কোনও কোনও মহলের অপতৎপরতা লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে জনগণকে প্রভাবিত করার অপচেষ্টা হয়েছে। গত আগস্টে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়ে বিভিন্ন জায়গায় ছাত্র মারা গেছে বা পুলিশের হাতে শিক্ষার্থীরা নিগৃহীত হয়েছে— ফেসবুকের মাধ্যমে এমন মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়।

সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা অন্যদের থেকে একধাপ এগিয়ে আছি। আমরা ফেক নিউজের পাশাপাশি ফেক ওয়েবসাইটও তৈরি করছি।’ তিনি বলেন, ‘যারা ফেক নিউজ ছড়ায় তারা তিন ধরনের মানুষকে মাথায় রেখে কাজটি করে। প্রথমটি হলো, যারা খবরটি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে, দ্বিতীয়, যারা খবরটি পড়ে মজা পায়, কিন্তু সবসময় বিশ্বাস করে না এবং তৃতীয় হলো, যারা খবরটি পড়ে বিশ্বাস করে।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষের মধ্যে সন্দেহ তৈরি করা গেলেও তারা (ফেক নিউজ ছড়ায় যারা) অর্ধেক সফল।’ নির্বাচনের সময়ে দুই ধরনের ফেক নিউজ ক্যাম্পেন চালানো হয় বলে জানান তিনি। প্রথমটি হচ্ছে সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর জন্য এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে নির্দিষ্ট কোনও জনগোষ্ঠীর জন্য (যেমন শুধুমাত্র একটি সংসদীয় আসনের মানুষকে টার্গেট করা)। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের ক্যাম্পেন সামনের দিনগুলিতে অনেক বেশি দেখা যাবে বলে মনে হয়।’
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘তাদের এই সক্ষমতা নেই এবং আপাতদৃষ্টিতে তারা আগ্রহী বলে মনে হয় না। আমরা ফেক নিউজ নিয়ে তাদের আগ্রহের প্রতিফলন দেখতে পাই না।’ এটি প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে জনগণের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা বলে মত দেন তিনি।
বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগে বাস করি এবং আমাদের এর সঙ্গে সহাবস্থান শিখতে হবে।’
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মাদ তৌহিদ হোসেন মনে করেন, ফেক নিউজ আমাদের সমাজে তেমনভাবে প্রভাব রাখবে না। তিনি বলেন, ‘যখন আমাদের নেতারা প্রকাশ্যে এক অপরের বিরুদ্ধে মিথ্যা বিষোদগার করছেন এবং প্রতিদিন প্রতিটি জাতীয় দৈনিকে তা ছাপা হচ্ছে, সেখানে ফেক নিউজ তেমন গুরুত্ব রাখে না।’ তবে তিনি বলেন, ‘তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যে এর প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, তারা অধিকাংশ ফেসবুকে আসক্ত।’
পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র লেকচারার জিম ম্যাকগন বলেন, ‘আজকের পৃথিবীতে রাজনীতিবিদদের মিডিয়া বা থিংক-ট্যাংকয়ের প্রয়োজন নেই। তারা এই মধ্যস্বত্বদের বাদ দিয়ে সরাসরি ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে পারে এবং এটিই বাস্তবতা।’
তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেটের মাধ্যমে এখন যেভাবে তথ্য আদান-প্রদান করা সম্ভব, এর আগে সেটি কখনও সম্ভব ছিল না।’ প্রযুক্তির অগ্রসরতা আমাদের সবার জীবনকে বাধাগ্রস্ত করছে এবং এটি সামনের দিনগুলিতেও করতে থাকবে বলে মত দেন তিনি।
জিম ম্যাকগন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ লোক সরকারকে বিশ্বাস করে না, কিন্তু তাদের ফেসবুক বন্ধুদের বিশ্বাস করে। এবং এই সামাজিক মাধ্যম দিয়ে তাদের বোকা বানানো সহজ।’