তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে কওমি শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের অভিযোগ

 

ছবিটি ফেসবুক থেকে নেওয়াতাবলিগ জামাতের দু’পক্ষের বিরোধে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। টঙ্গীতে ইজতেমার মাঠে ও  রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন দুই শতাধিক, যার মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীও রয়েছেন। এছাড়াও সত্তর বছর বয়সী এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, সাদ অনুসারীদের ঠেকাতে বেশ কয়েকদিন আগেই ইজতেমার মাঠে আনা হয় বিভিন্ন কওমি মাদ্রসার শিক্ষার্থীদের। আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১০ বছরের কম বয়সী শিশুও দেখা গেছে।

জানা গেছে, ভারতের দিল্লি মারকাজের মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা ৩০ নভেম্বর থেকে পাঁচ দিনের জোড় করার ঘোষণা দেন। তারা যেন এই ইজতেমা না করতে পারেন, এ জন্য কয়েকদিন আগে থেকেই সাদ বিরোধী অংশ টঙ্গীতে ইজতেমার মাঠ দখলে নেয়। মঙ্গলবার থেকে বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের আনা হয় টঙ্গী মাঠে। সাদ বিরোধী অংশের তাবলিগের শুরা সদস্য মাওলানা জুবায়েরের নেতৃত্বে টঙ্গি ইজতেমা মাঠে প্রবেশ পথগুলোতে বসানো হয় পাহারা।

তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছেসূত্র জানায়, তাবলিগের সাদ বিরোধী অংশকে সমর্থন দিয়ে আসছে হেফাজতে ইসলামপন্থী কওমি আলেমরা। হেফাজতের আমিরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের উপিস্থিতি অনুষ্ঠিত সভায় সাদ অনুসারীদের প্রতিহতের ঘোষণাও দেওয়া হয়।

জানা গেছে, শুক্রবার রাতেই মাওলানা সাদের অনুসারীরা টঙ্গী ময়দানে ঢুকতে না পেরে আশপাশের মসজিদে অবস্থান নেন। শনিবার ফজরের নামাজের পর থেকে সাদপন্থীরা টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে যেতে থাকলে রাজধানীর বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ড, উত্তরা, কামারপাড়া, আশুলিয়ায় বাধার মুখে পড়েন। বেশিরভাগ রাস্তায় দেখা গেছে তাবলিগের কর্মীদের সঙ্গে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা আছেন। একপর্যায়ে সাদ বিরোধীদের সঙ্গে সাদ অনুসারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পুলিশ অবস্থান নেয়।

সরেজমিনে বিমানবন্দর ঘুরে দেখা যায়, সাদ বিরোধীরা বিমানবন্দর সড়কের প্রতিটি বাস তল্লাশি করে। তবে এদের মধ্যে বেশিরভাগই গাজীপুর-টঙ্গী ও বিমানবন্দর-আশকোনারসহ রাজধানীর বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিলেন। বিমানবন্দর এলাকায় সকল প্রকার বাসে থাকা তাবলিগ কর্মীদের জোরপূর্বক নামিয়ে দেওয়া হয়। যাতে সাদপন্থী কোনও মুসল্লি ময়দানে যেতে না পারে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই ১০ থেকে ২২ বছরের বয়সী। বিমানবন্দর এলাকায় কয়েকজন শিক্ষার্থী নিয়ে এ কাজ করছিলেন একটি মাদ্রাসার শিক্ষক  মো. সাখাওয়াত। তার সঙ্গে ১০ জন শিক্ষার্থী ছিল।  তবে, তারা কোন মাদ্রাসা থেকে  এসেছেন, কেন শিক্ষার্থীদের আনা হয়েছে; এমন প্রশ্ন করলে উত্তেজিত হয়ে উঠেন মো. সাখাওয়াত। তিনি বলেন,  ‘এত প্রশ্নের উত্তর দেবো না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের কর্মসূচি পালন করছি। আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আমরা ময়দান ছাড়বো না। আমাদের মুরব্বিরা সিন্ধান্ত দিলে সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করবো। ’

তাবলিগ জামাতের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় বিমান বন্দর এলাকার সড়কে এক পক্ষের অবস্থানশিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে বাধা দেন শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে আসার কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট কোনও কিছু বলতে পারেননি।

টঙ্গী মাঠে সাদ অনুসারীরা বাধার মুখে জোরপূর্বক মাঠে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তাদের বাধা দেয় কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও তাবলিগের সাদ বিরোধী অংশ। দু’পক্ষই ইট-পাটকেল ছুড়েতে থাকে। লাঠি দিয়েও মারামারির ঘটনা ঘটে। ইটের আঘাত, হাতাহাতি, লাঠির আঘাতে দুই শতাধিক মানুষ আহত হন।

অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মাদ্রাসা জামিয়াতুল আবরার রাহমানীয়া থেকে শিক্ষার্থীদেরও টঙ্গী মাঠে নেওয়া হয়। এ মাদ্রাসাটি পরিচালনা করেন মুফতি মনসুরুল হক। এ মাদ্রাসার অনেক শিক্ষার্থী আহত হন। আহতদের অনেকের সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে তারা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

শিক্ষার্থীরা জানান, বুধবার রাতেই তাদের টঙ্গী ইজতেমার মাঠে নেওয়া হয়। এমনকি মাঠে তাদের উপস্থিতির হাজিরাও নেন শিক্ষকরা। মাঠে তাদের কেন নেওয়া হচ্ছে আগে থেকে জানতেন না।

এদিকে গত ১৫ নভেম্বর সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাবলিগ জামাতের দু’পক্ষকে নিয়ে বসা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, নির্বাচনের আগপর্যন্ত আসন্ন বিশ্ব ইজতেমা স্থগিত থাকবে। একইসঙ্গে তাবলিগের দুপক্ষের সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে। তারা কোনও জোড়, ওজহাতি জোড় কিছুই করতে পারবেন না। নির্বাচনের পর  বৈঠক করে  ইজতেমানর তারিখ নির্ধারণ করা হবে।

তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় এক পক্ষের সদস্যদের অবস্থানএ বিষয়ে জানতে সাদ অনুসারী তাবলিগ জামাতের শুরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামকে টেলিফোন করলে তিনি লাইন কেটে ফোন বন্ধ করে দেন।

অন্যদিকে সাদ বিরোধী অংশের শুরা সদস্য জুবায়ের আহমেদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।  অপর শুরা সদস্য মাওলানা রবিউল হককে ফোন করলে তিনিও ফোন কল রিসিভ করেননি।

তবে তাবলিগের এ অংশের দায়িত্বশীল  ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজ হান্নান বলেন,  ‘ইজতেমার জন্য তিন-চার মাস আগে প্রস্তুতি নিতে হয়। এজন্য আমরা টঙ্গী মাঠে গিয়েছিলাম, প্রস্তুতির কাজ করতে। আমাদের কোনও জোড় ছিল না। কিন্তু, সাদের অনুসারীরা সরকারের নির্দেশ অমান্য করে টঙ্গী মাঠে জোড় করতে আসে। তারা স্বেচ্ছায়  সংঘর্ষ বাধানোর চেষ্টা করেন।’

মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজ হান্নান বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বরাবরই আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়েছিল।  ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও এর  বাইরে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলে সমস্যা না হলে, কওমি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমস্যা কেন। যদিও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে আসেনি, তাবলিগের কাজে অংশ নিতে এসেছিল। আজকের ঘটনার জন্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামরা দায়ী।’