একই অভিযোগ পোশাক শ্রমিক রাহেলার। তিনি বলেন, ‘ঘর ভাড়া, বাজার সদাই করে মাস চলাই মুশকিল। এর কয়দিন আগেই গ্যাস এর জন্য বাড়াইলো, আগামী মাসে আবারও গ্যাসের জন্য বাড়াইবো কইছে। অ্যামনে বাড়াইতেছে আর কয় তোমগো না বেতন বাড়ছে। বাড়তি সেই বেতনের ট্যাকা কই আপা?’
এদিকে রামপুরা এলাকায় ছোট ছোট ঘুপচি ঘরে পোশাক শ্রমিকদের থাকার জায়গা আছে বেশ কয়েকটা। তুলনামূলক এ এলাকায় বেশি ভাড়ার কারণে পরিবার না থাকলে সেখানে একটি ঘরেই একসঙ্গে সাত-আটজন পোশাক শ্রমিক থাকেন। একেকটি ঘর তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকাও দিতে হয়। কোনও কোনও ঘরমালিক একসঙ্গে অনেকে থাকলে ভাড়াও হাঁকেন অনেক বেশি।
রাজধানী ও আশপাশের শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের শেষ থেকেই ঘরমালিক ভাড়া বাড়িয়ে দিতে শুরু করেছেন। নতুন মজুরি কাঠামো হচ্ছে এমন সংবাদ টেলিভিশনে দেখেই তারা চারশ’ থেকে সাড়ে ছয়শ’ পর্যন্ত ভাড়া বাড়িয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন শ্রমিকরা। তারা এও বলছেন, হয়তো বেতনের পাঁচশ’ টাকা বাড়েইনি কিন্তু ঠিকই তারচেয়ে বেশি ঘরভাড়া গুনতে হবে।
তবে এ সমস্যার সমাধানে কোনও আশার কথা শোনাতে পারেনি বিজিএমইএ। তারা বলছে, সরকার চাইলে শ্রমিকদের জন্য ডরমেটরির ব্যবস্থা করে দিতে পারে কিন্তু আলাদাভাবে মালিকদের পক্ষে এই উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব না।
এদিকে যতটা ভেবেছিলেন ততটা মজুরি বৃদ্ধি না হওয়ায় শ্রমিকদের অন্যান্য খরচে টান পড়ছে রোজ। রাজধানীর গার্মেন্টস এলাকাগুলোর বাইরে ইপিজেড, আশুলিয়া, সাভারের বেশ কয়েকটি এলাকাতেও খোঁজ নিয়ে ঘর ভাড়া বৃদ্ধির কথা জানা গেছে। নরসিংহপুরের রাসনা বলেন, ‘আমাদের ঘর তো দেখেছেনই, খুপরি। সে ঘর ভাড়াও দুইশ’ বাড়ছে। এ যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।’
পোশাক শ্রমিক রীনা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতি জানুয়ারিতে কয়েকশ’ টাকা ভাড়া বাড়ে, এর কোনও বদল দেখিনি। কিন্তু এবার ডিসেম্বরে বেতন বাড়ানোর কথা উঠতেই ঘরের মালিকরা ভাড়া একটু বেশিই বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমরা কীভাবে চলি সেটা দেখার যেন কেউ নেই। গ্যাসের দাম বাড়লে ভাড়া বাড়ে, বিদ্যুতের দাম বাড়লে ভাড়া বাড়ে, আমার বেতন বাড়ার ঘোষণাতেও ভাড়া বাড়ে। এ যেন এক অরাজক অবস্থা।’
যে শ্রমিকদের শ্রমে ও ঘামে তৈরি পোশাক শিল্প টিকে আছে তাদের আবাসন সমস্যা সমাধানে শিল্প মালিকদের তেমন কোনও উদ্যোগ নেই। শ্রমিকদের জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর নেই কোনও ডরমেটরি বা অন্য কোনও আবাসন ব্যবস্থা।
এ বিষয়ে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাসির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পোশাক শ্রমিকদের থাকার জায়গা একটা বড় সমস্যা। তবে শ্রমিকদের জন্য ডরমেটরির ব্যবস্থা বিজিএমইএ’র পক্ষে করে দেওয়া সম্ভব না। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এমন একটা কাজ হবে বলে শুনেছিলাম। কিন্তু কোনও এক কারণে আর সেটি এগোয়নি। এখানে আমাদেরকে সম্পৃক্ত না করে সরাসরি সরকারই পারে কোনও একটা ব্যবস্থা করতে।’
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন