বৈষম্য দূর করা হবে: পরিকল্পনামন্ত্রী

সেমিনারে বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানপরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন ‘দেশে বৈষম্য দূর করা হবে। তবে এটি সবার মাথা কেটে সমান করার মতো নয়। দেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাচ্ছে কি না, ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারছে কি না সেটা দেখা হবে। আমি মনে করি, দেশের প্রায় সব খাতেই বাস্তবায়নের ঘাটতি আছে। আমরা সেই ঘাটতি পূরণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, জনবল নিচ্ছি। আশা করছি, অচিরেই ঘাটতিগুলো পূরণ হবে।’

রবিবার (২০ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের উদ্যোগে 'এক দশকের উন্নয়ন: পরিপ্রেক্ষিত গ্রামীণ জনপদ' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

দেশের যানজটের বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, 'দেশের যানজট নিয়ে কথা হচ্ছে, এটা নিরসনের জন্য মেট্রোরেল তৈরি করা হচ্ছে। যদি আমরা ইতিবাচকভাবে দেখি, তাহলে বিষয়টি পরিষ্কার, কারণ কিছু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্য প্রথমে একটু কষ্ট করতেই হবে।’

সৌদি আরব থেকে রেমিটেন্সের পাশাপাশি অপসংস্কৃতিও আসে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘সৌদি আরবসহ কালচারালি ব্যাকওয়ার্ড দেশে নারী তো নয়ই, যেন আমাদের কোনও পুরুষেরও যেতে না হয় তার প্রতি দৃষ্টি দেবেন। কারণ, সৌদি আরব থেকে শুধু ডলার আসে না, যত লোক সৌদি আরব গেছেন, তারা ফিরে দেশে একটি করে নুরানি মাদ্রাসা দিয়েছে। তার ছেলে মেয়েরা প্রাইমারি স্কুলে পড়ে না, নুরানি মাদ্রাসায় পড়ে। সৌদি আরব কালচারাল ব্যাকওয়ার্ড একটি দেশ। সৌদি আরবে আমাদের ম্যানপাওয়ার যাওয়া বন্ধ করতে হবে। ওই লোকগুলোর জন্য দেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। রাশিয়া-জাপানসহ বিভিন্ন দেশে আমাদের ডিমান্ড আছে, সেদিকে যেতে হবে। সৌদি আরব থেকে আমাদের সব মহিলাদের ফিরিয়ে আনতে হবে এবং কোনও পুরুষকে যেন যেতে না হয় সে দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। সৌদি আরব থেকে যে অপসংস্কৃতি আমাদের দেশে আসছে তার একটি হলো জঙ্গিবাদ। এই অপসংস্কৃতি আমাদের কালচারকে ধ্বংস করে দেওয়ার চেষ্টা করছে।’

জাবি উপাচার্য আরও বলেন, ‘শহরে মানুষকে আসতেই হয়। কারণ এখানে কর্মসংস্থান আছে, চাকরি আছে। গ্রামের মানুষের শহরে আসার প্রবণতা যাতে কমাতে পারি সেজন্য শহরের কিছু আকর্ষণীয় বিষয় আমাদের গ্রামে নিয়ে যেতে হবে।’

এসময় নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও কলামিস্ট মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মদ আলী সিকদার (অব.) বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, চেতনা, আদর্শের দর্শন গত ১০ বছরে একাধারে পরিচালিত হয়েছে বলেই দেশে উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। তবে ২০০১-২০০৭ সালের ধর্মান্ধতা থাকলে এ উন্নয়ন সম্ভব হতো না। আমরা প্রত্যাশা করি, আগামীতে জয়ের ধারা, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।’

এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট এবং ডাকসুর সাবেক ভিপি অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেন, ‘আজকের গ্রামের উন্নয়ন দারুনভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে এবং সেখানে মেয়েরা ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। বর্তমানে মেয়েরা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। এটা আমরা অহরহই দেখতে পাচ্ছি কিন্তু তাদের নিরাপত্তা নেই। মেয়েদের যদি নিরাপত্তা না দেওয়া হয়, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে পারবো না। আমার কাছে মনে হয়, অর্থনেতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতির যদি উন্নতি না ঘটে, মানুষের যদি মানসিকতার পরিবর্তন না হয়, তবে এই উন্নয়ন ভেস্তে যাবে।’

সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন— উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ মান্নান, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ প্রমুখ। সেমিনারের শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কলামিস্ট ড. মিল্টন বিশ্বাস।