২০১৮ সালের দুর্ঘটনায় নিহত ৭৭৯৬




সড়ক দুর্ঘটনা (ফাইল ছবি)
২০১৮ সালে সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথে মোট ৬ হাজার ৪৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। আর এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন মোট ৭ হাজার ৭৯৬ জন এবং আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৯৮০ জন। শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘বার্ষিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০১৮’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

তিনি জানান, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে ২০১৮ সালের পাঁচ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় সাত হাজার ২২১ জন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে রেলপথের ৩৭০টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৯৪ জন, নৌপথের ১৫৯টি দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ১২৬ এবং আকাশপথে পাঁচটি দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৫৫ জন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংঘটিত দুর্ঘটনার ৪১.৫৩ শতাংশ গাড়িচাপা, ২৯.৭২ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৬.৮৮ শতাংশ খাদে পড়ে, ০.৫৫ শতাংশ চাকায় ওড়না পেচিয়ে এবং ০.৮৯ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের কারণে হয়েছে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে মহাসচিব বলেন, ‘বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, রাস্তাঘাটের নির্মাণ ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে গাড়ি চালানো, রেল ক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা সহ আরও বেশ কয়েকটি কারণে এসব দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।’

দুর্ঘটনা বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সংবাদ সম্মেলনসংবাদ সম্মেলনে তিনি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন। সুপারিশগুলো মধ্যে রয়েছে- ট্রাফিক আইন, মোটরযান আইন ও সড়ক ব্যবহার বিধি বিধান স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং মসজিদ-মন্দির-গির্জায় জনসাধারণের জন্য ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। গণপরিবহন চালকদের প্রফেশনাল ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। গাড়ির ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করতে হবে। এছাড়া জাতীয় মহাসড়কে স্বল্প গতি ও দ্রুতগতি যানের জন্য আলাদা লেনের ব্যবস্থা করাসহ মোট ১২টি সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া যথেষ্ট নয়। এই উদ্যোগ ফলপ্রসূ হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে। বেপরোয়া চলাচলের মনোভাব কেন কমানো যাচ্ছে না, চাপ কেন কমানো যাচ্ছে না ও অসতর্কতা কেন থেকে যাচ্ছে এই তিনটি বিষয় আমাদের আন্তরিকতার সঙ্গে বিশ্লেষণ করে জবাবদিহিতা বাস্তবতা তৈরি করতে হবে।’

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ‘আমাদের সড়কে কখনোই শৃঙ্খলা ফিরবে না। কারণ, এখানে একটি দুষ্টচক্র কাজ করে। সড়কের ঠিকাদারদের যারা সুপারভাইস করে সেই ইঞ্জিনিয়ার, সড়কে শৃঙ্খলা যারা বজায় রাখে সেই পুলিশ, সড়কে যারা যানবাহন চালান সেই মালিক এবং শ্রমিক মিলে বিশাল দুর্নীতির দুষ্টচক্র গড়ে তুলেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের আগে দুটি আইন খুব তাড়াহুড়ো করে সংসদে পাস হয়। একটি ছিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, আর অন্যটি সড়ক পরিবহন আইন। দুটি আইন একই দিনে পাশ হয়েছিল সংসদে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন খুব দ্রুততার সঙ্গে কার্যকর করা হয়। কিন্তু সড়কের আইনটি কার্যকর করা হয়নি। কারণ, সড়কে যারা এ আইনের বিরোধিতা করে তাদের শক্তির কাছে মাথা নোয়ানো হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, সাবেক বিআরটিএর চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান ও সিনিয়র সাংবাদিক কুদ্দুস আফ্রাদ প্রমুখ।