শনিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আর বাংলা একডেমি প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায় মেলা আয়োজনের প্রস্তুতির চিরচেনা দৃশ্য। কোনও স্টলে পেরেক ঠোকার শব্দ, কোনও স্টলে করাত দিয়ে কাঠ কাটছেন মিস্ত্রিরা, আবার কোনও কোনও স্টলে চলছে রঙ করার কাজ। পুরো কর্মযজ্ঞ বই উৎসব শুরুর আগেই ছড়িয়ে দিয়েছে উৎসবের আনন্দ বার্তা।
প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের সুযোগ রেখে এবার প্রথমবারের মতো মেলাকে ভাগ করা হয়েছে পাঁচজন ভাষা শহীদের নামে। সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিউরের নামে থাকছে আলাদা পাঁচ চত্বর। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের নাম রাখা হয়েছে শহীদ বরকতের নামে। প্রত্যেক ভাষা শহীদের নামাঙ্কিত চত্বরের সামনে শোভা পাবে তাদের প্রতিকৃতি।
এবারের গ্রন্থমেলার নকশা করেছেন খ্যাতিমান স্থপতি এনামুল করিম নির্ঝর। মেলার বিশেষ আকর্ষণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিজয় স্তম্ভ, গ্লাস টাওয়ারসহ বিজয়ের পুরো আঙিনা মেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে দর্শনার্থীরা মেলা উপভোগের পাশাপাশি বিজয় স্তম্ভও প্রত্যক্ষ করতে পারবেন।
মেলার প্রস্তুতির বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, ‘বই মেলার মূল ভেন্যু সবদিক চিন্তা করে সুবিন্যস্ত করা হচ্ছে। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সব স্টল তৈরি করা হবে। কোনও অসমাপ্ত স্টল থাকবে না।’
তিনি বলেন, ‘মেলায় আসার পথে আগে যত দুর্ভোগ পোহাতে হতো, এবার তা পোহাতে হবে না। এজন্য উদ্বোধনের আগেই শাহবাগ থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত পায়ে হেঁটে দেখা হবে। একজন সাধারণ পাঠক যেভাবে শাহবাগ বা দোয়েল চত্বর দিয়ে পায়ে হেঁটে মেলায় প্রবেশ করেন, আমরাও তাদের মতো প্রবেশ করবো। পুরো এলাকা ঘুরবো। ফুটপাত ও এর আশপাশের পরিবেশ কেমন তা দেখবো।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাঠকদের সুবিধার জন্য এবার মেলার প্রবেশ পথে বসানো হচ্ছে ডিজিটাল মনিটর। এই মনিটরের মাধ্যমে পাঠক জানতে পারবেন তিনি মেলার কোন অংশে অবস্থান করছেন এবং মেলার কোথায় কোন কোন প্রকাশনীর স্টল আছে। প্রবেশ পথগুলোও দেখা যাবে এই মনিটরের মাধ্যমে। ডিজিটাল মনিটরে প্রদর্শিত হবে নানা তথ্য ও মেলাসংক্রান্ত নির্দেশনা।
এবারের মেলায় দেশের আর্থিক লেনদেনবিষয়ক চলমান সব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্রেতারা বই কেনার সুযোগ পাবেন। বিশেষ করে বিকাশ, আইপিএ, ইউপিএ-এর মতো অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে পাঠকরা বই কিনতে পারবেন। এবারের মেলার কার্যক্রমও ডিজিটাল পদ্ধতিতে করা হচ্ছে। স্টলের আবেদনপত্র এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে ফল, লটারি, স্টল ভাড়া সবই করা হয়েছে ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে।
তিনি আরও জানান, প্রথমবারের মতো মেলাকে কেন্দ্র করে খোলা হয়েছে একাডেমির নিজস্ব ওয়েবসাইট। www.ba21bookfair.com নামের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পাঠকরা প্রকাশনীর নাম এবং পাসওয়ার্ড দেওয়ার মাধ্যমে জানতে পারবেন প্রকাশনীটির স্টল কোথায়। কী কী বই পাওয়া যাবে সেসব স্টলে।
লেখকের সঙ্গে পাঠকের সৌহার্দ্য বাড়াতে প্রথমবারের মতো মেলায় ব্যবস্থা করা হয়েছে ‘লেখক বলছি’ নামের মঞ্চ। প্রতিদিন পাঁচজন করে লেখক তাদের নতুন বই নিয়ে এই মঞ্চে আলোচনা করবেন। এছাড়া প্রতিবছরের মতো মেলার মূল মঞ্চে ধারাবাহিক সেমিনারও হবে।
বইমেলায় শিশুদের জন্য প্রতিবারের মতো এবারও থাকবে নানা আয়োজন। শুক্র ও শনিবার মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়। এই দু’দিন শিশুদের জন্য যথারীতি থাকবে ‘শিশু প্রহর’। তবে প্রথম দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুক্রবার হওয়ায় এদিন শিশু প্রহর থাকছে না।
এছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন মিসরের লেখক ও সাংবাদিক মোহসেন আল-আরিশি। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে যে গ্রন্থ লিখেছেন সেটির অনুবাদ প্রকাশ করেছে বাংলা একাডেমি। বইটির শিরোনাম ‘যে রূপকথা শুধু রূপকথা নয়’। উদ্বোধনের পরদিন থেকে প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে বইমেলা।
এবারের বইমেলায় ছয় শ’র বেশি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। থাকবে মোট ৪২টি প্যাভিলিয়ন। বড় প্যাভিলিয়ন ১০টি, ছয় ইউনিটের প্যাভিলিয়ন ১৩টি এবং চার ইউনিটের প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ পেয়েছে ১৯টি। এসব স্টল ও প্যাভিলিয়ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকবে। অন্যদিকে, একাডেমির ভেতরে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের ১০০টি স্টল থাকবে।