নদী তীরের ৫২১ একর জমি কোথায়?

ভেঙে ফেলা হচ্ছে বুড়িগঙ্গার তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা নদীর তীরে অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করা ৫২১ একর জমির মধ্যে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে মাত্র ২১ কিলোমিটার। নির্মাণের অপেক্ষায় রয়েছে আরও ৫০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে। তাহলে বাকি জমি কোথায় গেলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) একদিকে জমি উদ্ধার করে, পরক্ষণেই সেই জমি আবার বেদখল হয়ে যায়। পুরনো দখলদাররাই তা আবার নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। জনবল এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে সেই জমি দখলে রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে না বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের। আর এভাবেই চলছে নদী দখলদারদের হাত থেকে নদী তীরের ভূমি উদ্ধার এবং বেদখল হয়ে যাওয়ার খেলা। একদিকে ভাঙছে, অপরদিকে আবার গড়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা।

অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান ৩৪ বছর ধরে বুড়িগঙ্গার পাড়ে আধাপাকা চারটি ঘর তৈরি করে ব্যবসা করছেন কেরানীগঞ্জের মোবারক হোসেন।  নিজে একটিতে হোটেল ব্যবসা করছেন। বাকি তিনটি ভাড়া দিয়েছেন। স্থাপনা নির্মাণে তার মোট ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। ভাড়া বাবদ তিনি প্রতিমাসে তিনটি ঘর থেকে পান ৩০ হাজার টাকা। আর নিজের হোটেল ব্যবসায় মুনাফা করেন ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে চারটি ঘর থেকে তার মাসিক আয় ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন মহলকে খুশি করতে তার মাসে ব্যয় হয় ২০ হাজার টাকা। বাকি থাকে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা। তিনি জানিয়েছেন, ‘যতোই ভাঙুক, মুনাফা আমরা করবোই। ভাঙবে, আবার গড়বো। ঘর নির্মাণের খরচ তুলতে আমাদের চার মাসই যথেষ্ট।’

মোবারক হোসেনের মতো শত শত লোক নদীর তীরভূমি দখল করে রাখছে বছরের পর বছর। কেউ কেউ বহুতল ভবনও গড়েছে। একরের পর একর জমি এখনও তাদের দখলে রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় তথা বিআইডব্লিউটিএর এক শ্রেণির কর্মকর্তা, স্থানীয় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের যোগসাজশে মোবারকের মতো মানুষরা সরকারি এসব জমি দখল করে বছরের পর বছর ব্যবসা করছে।

উচ্ছেদ অভিযান চলছে জানা গেছে, ২০১০ সালের ৯ মার্চ থেকে ২০১৯ মালের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত এই ১০ বছরে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে সর্বমোট ৫২১ দশমিক ৬২ একর নদী তীরভূমি উদ্ধার করেছে বিআইডব্লিউটিএ। বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করে এই জমি উদ্ধার করা হলেও এ পর্যন্ত সর্বমোট ২১ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ৫০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণের অপেক্ষায় রয়েছে। নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের করা ‘ঢাকার চারপাশের বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু ও ধলেশ্বরী নদীর দখল-দূষণ রোধকল্পে এ যাবত গৃহীত কার্যক্রম এবং ভবিষ্যতে গৃহীতব্য কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত প্রয়াস’ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের নদীবন্দরের তীরভূমিতে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য ২০১০ সালের সর্বপ্রথম উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়। এ দুটি নদীবন্দরের নিয়ন্ত্রণে ২০১০ সালের ৯ মার্চ থেকে ২০১৯ সালের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সর্বমোট ১২ হাজার ৮৬৩ টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এর মধ্যে পাকা স্থাপনার সংখ্যা এক হাজার ১১টি। আধাপাকা স্থাপনার সংখ্যা এক হাজার ১২২টি। এবং অন্যান্য স্থাপনার সংখ্যা ১০ হাজার ৭৩০টি। এই উচ্ছেদ অভিযানে সর্বমোট নদীর তীরভূমি উদ্ধারের পরিমাণ ৫২১ দশমিক ৬৩ একর।

অভিযান চলাকালে উৎসুক মানুষের ভিড়এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুস সামাদ জানান, ‘ঢাকা শহরের প্রাণ নামে খ্যাত বুড়িগঙ্গা নদী তীরকে আরও আকর্ষণীয় করতে শ্যামপুরের কদমতলীতে শ্যামপুর বিআইডব্লিউটিএ ইকোপার্ক এবং নারায়ণগঞ্জের খানপুর এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে বিআইডব্লউটিএ চৌরঙ্গী ইকোপার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়াও আশুলিয়া, সিন্নিরটেক, টঙ্গী এবং কাঁচপুর এলাকায় আরও  চারটি ইকোপার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে।’

উচ্ছেদের পরও আবার ওইসব জমি দখল হয়ে যাওয়ার বিষয়ে সচিব আবদুস সামাদ বলেন, ‘দখল করা তীরভূমি যদি আবার দখল হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে তা আবারও উদ্ধার করা হবে। যারা এ সম্পত্তি পুনরায় দখল করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’