সকালে ফাঁকা থাকলেও বিকালে বইমেলায় ভিড়

দুপুরের পর থেকে বইমেলায় ভিড় বাড়তে থাকেঅমর একুশে গ্রন্থমেলা অন্যান্য বছর ২১ তারিখ সকাল থেকেই পাঠক-দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেলেও এবার সেটি হয়নি। তবে বেলা গড়িয়ে বিকাল হতেই ভিড় বাড়তে শুরু করে মেলায়। এছাড়া আজ শিশু চত্বরে শিশুদের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি।  

দুপুরের পর পুরো মেলা প্রাঙ্গণ ও আশেপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পাঠক ও দর্শনার্থীরা লাইন ধরে মেলায় প্রবেশ করছেন। আর মেলা প্রাঙ্গণটি রয়েছে পাঠক দর্শনার্থীতে কানায় কানায় পূর্ণ। কেউ কেউ স্টলে স্টলে ঘুরে নতুন বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ পছন্দের লেখকের বই কেনার পাশাপাশি নতুন লেখকদের বইও দেখছেন।

স্টলে বই দেখতে দেখতে নতুন বাজার থেকে আগত শিক্ষক জাহান সুলতানার সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের। তিনি বলেন, 'ছুটির দিন হওয়াতে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আজ বইমেলায় এসেছি। যদিও আজকে অনেক ভিড় মনে হচ্ছে, কিন্তু অন্যান্য দিন তো কাজের জন্য আসতে পারি না। মেলা থেকে আজ পছন্দের কয়েকজন লেখকের বই আর ছেলের জন্য শিশুতোষ কিছু বই কিনবো।’

বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং আগামী দুদিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধ মিলিয়ে মোট তিনদিনের ছুটি মিলেছে নগরবাসীর। এরইমধ্যে নাড়ীর টানে ঢাকা ছেড়েছে অধিকাংশ নগরবাসী। তাই অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কিছুটা কম লোকসমাগম হয়েছে মেলায়। কিন্তু সকালে একদমই প্রায় ফাঁকা ছিলো বইমেলা।

উত্তরা থেকে আসা ব্যাংকার আল-আমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'অনেকেই এই ছুটিতে ঢাকা ছেড়েছে। আমার যেহেতু সবকিছু ঢাকাতেই, তাই কোথাও যাওয়া হয়নি। আজকের বিকালটা স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মেলাতেই কাটাবো, কিছু বইও কিনবো। ভাষাশহীদের স্মরণ করবো।’

এদিকে পাঠক সমাগম বাড়ায় অনেকটা স্বস্তি প্রকাশ করছেন স্টল ব্যবস্থাপকরা।

পুঁথিনিলয় প্রকাশনার স্টল ব্যবস্থাপক নিশীথ দাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অন্যান্য দিনের তুলনায় বন্ধের দিন বিক্রি বাড়ে। আজ যেহেতু বিশেষ দিন, দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।’

এছাড়াও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বইমেলায় আজকে নতুন বই প্রকাশ হয়েছে ১৯২টি এবং গত ২১ দিনে মোট বই প্রকাশ হয়েছে ৩১৫৯টি।

একুশের সকালে ফাঁকা বইমেলা

অন্যান্য বছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে সকাল থেকে মেলায় লোকসমাগম বেশি থাকলেও এ বছর তা অনেক কম। সকালে বইমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায় পাঠক, দর্শনার্থী ও ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম। প্রতিবছরের মতো সকাল ৮টা থেকেই শুরু হয়েছে আজকের বইমেলা। অন্যান্য বছর শহীদ মিনারে ফুল দিয়েই সকাল-সকাল বই মেলায় চলে আসতে থাকেন বইপ্রেমী ও দর্শনার্থীরা। কিন্তু সকাল ১০টার দিকেও টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত ছিল অনেকটাই ফাঁকা।

সকালে মেলায় উপস্থিতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অবসর প্রকাশনার ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'অন্যান্য বারের তুলনায় সকালে এবার লোকসংখ্যা খুবই কম ছিল। সকাল ৮টায় দোকান খুলে খুব-একটা মানুষজন দেখা যায়নি। একসঙ্গে তিন দিনের ছুটির জন্য হয়তো ঢাকাবাসী ঢাকা ছেড়েছে। সেজন্য মানুষজন কম দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও গত রাতে চকবাজারের দুর্ঘটনার প্রভাব রয়েছে।’

শিশু চত্বরে আনন্দঘন সময় কাটাচ্ছে শিশুরামুখরিত শিশু চত্বর 

আজ বইমেলায় লোকসমাগম কম হলেও শিশু চত্বর ছিল মুখরিত। এখানে তারা আনন্দ-উল্লাস করে সময় কাটিয়েছে। এ চত্বরে শিশুদের জন্য আলাদা করে তৈরি করা হয়েছে আকর্ষণীয় গেট, যা দেখেই শিশুরা বুঝতে পারে এটা তাদের জন্যই তৈরি করা হয়েছে। এছাড়াও এ চত্বরে রয়েছে শিশু সাহিত্যের প্রায় সবকটি স্টল। চত্বরের মঞ্চে নানা বয়সের শিশুরা একসঙ্গে খেলায় মেতে উঠেছে। হই-হুল্লোড় করে সময় পার করছে তারা।

মিরপুর থেকে মাহমুদ কমল তার ছয় বছরের ছেলে জাহিনকে নিয়ে শহীদ মিনার ঘুরে মেলায় এসেছেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'বইমেলায় এই আয়োজনটি শিশুদের জন্য খুব ভালো হয়েছে। বর্তমান সময়ে ওরা চার দেয়ালে বন্দি থাকে। আমাদের মতো তো ওরা বেড়ে ওঠার সময় বাইরের পরিবেশে হই-হুল্লোড়ের সুযোগ পায় না। তাই এই একটু আয়োজনও ওদের জন্য বড় কিছু।’

সিসিমপুরের স্টলে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা হয় প্রথম শ্রেণি পড়ুয়া মোবাশিয়া তাসনিমের সঙ্গে। সে জানায়, মেলায় মায়ের সঙ্গে রাজকুমারী ও সিসিমপুরের বই কিনতে এসেছে। মেলায় আসতে তার খুবই ভালো লাগে।

শিশু চত্বর মঞ্চের পরিচালনায় নিয়োজিত ওয়াটার মার্কের ব্রান্ড প্রমোটার ফয়সাল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই চত্বরটি মূলত শিশুদের জন্যই করা। যাতে ওরা মেলায় এসে খেলাধুলা করতে পারে। এছাড়াও সিসিমপুরের চরিত্রগুলো প্রতি শুক্রবার ও শনিবার সরাসরি শিশুদের আনন্দ দিয়ে থাকে।

নিরাপত্তায় ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সদস্য

মেলার নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের ইনচার্জ শাহ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'আজকে মেলা প্রাঙ্গণে আমাদের ৪৫০ জন ফোর্স নিয়োজিত রয়েছেন। যেকোনও ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’

এদিকে, ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আল মাসুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবেলায় অফিসারসহ মোট ৩৭ জন কর্মী নিয়োজিত আছেন মেলা প্রাঙ্গণে। এছাড়া চকবাজারের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সিনিয়র অফিসাররা মেলা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করবেন।’