দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বাম গণতান্ত্রিক ফ্রণ্টসহ নিবন্ধিত বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ায় মাঠে ভোটের কোনও উত্তাপ দেখা যায়নি। নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যেও খুব একটা আগ্রহ চোখে পড়েনি। তবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা মন্দ ছিল না।
সিটি নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। বুধবার বিকালে কর্মকর্তারা নির্বাচনি সামগ্রী নিজ নিজ কেন্দ্রে নিয়ে গেছেন। তবে মেয়র পদের ব্যালট পেপার পাঠানো হলেও আগের রাতে সিল মারার শঙ্কায় ঢাকার দুই সিটির ৩৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদের ব্যালট পেপার পাঠানো হয়নি। বৃহস্পতিবার ভোরে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলোতে কাউন্সিলর পদের ব্যালট পেপার পাঠানো হয়।
ভোট উপলক্ষে ঢাকার দুই সিটি ও নির্বাচনি এলাকাগুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে যান চলাচল। তবে রাজধানীর জনজীবনের কথা বিবেচনায় নিয়ে দুই সিটির প্রধান সড়কে যান চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ চারটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রয়েছেন একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও।
নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য নির্বাহী ও জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটসহ পর্যাপ্ত সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব পর্যবেক্ষকরাও মাঠে থাকবেন। ভোটারদের নিরাপত্তায় বিজিবি, পুলিশ ও র্যাবের টিম টহলে থাকবে। এ ছাড়া, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। কমিশন সুষ্ঠু-সুন্দর নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।’
মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচিত মেয়র একবছরের কিছু বেশি সময় দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন। কাউন্সিলর পদে সাধারণ নির্বাচন হলেও তাদের মেয়াদও হবে মেয়র পদের সমান।
নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী যারা
ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে পাঁচ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন– আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলাম (নৌকা), জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ শাফিন আহমেদ (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান (আম), প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) শাহীন খান (বাঘ) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুর রহিম (টেবিল ঘড়ি)।
কাউন্সিলর প্রার্থী
ঢাকা উত্তর সিটিতে যুক্ত হওয়া ১৮টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১১৬ জন এবং সংরক্ষিত ছয়টি ওয়ার্ডে ৪৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্যদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১৮টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১২৫ জন ও সংরক্ষিত ছয়টি ওয়ার্ডে ২৪ জন প্রার্থী রয়েছেন।
ভোট কেন্দ্র ও ভোটকক্ষ
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে সাধারণ ওয়ার্ড ৫৪টি ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৮টি। এ সিটিতে ভোটকেন্দ্র একহাজার ২৯৫টি ও ভোটকক্ষ ছয় হাজার ৪৮২টি। ভোটার সংখ্যা ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৬২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫৩০ জন ও নারী ১৪ লাখ ৭২ হাজার ৯১ জন। উত্তরে নতুন করে যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ডে ভোটার ৫ লাখ ৯০ হাজার ৭০৫ জন। এ সিটির ২১ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিল পরে উপনির্বাচনও হচ্ছে বৃহস্পতিবার। এই পদে সাত জন প্রার্থী রয়েছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে সাধারণ ওয়ার্ডে ১৮টি ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড ছয়টি। এসব ওয়ার্ডে ভোটার চার লাখ ৯৬ হাজার ৭৩৫ জন; পুরুষ ২ লাখ ৫৪ হাজার ৪৯৭ জন ও নারী দুই লাখ ৪২ হাজার ২৩৮ জন। ভোটকেন্দ্র ২৩৫টি ও ভোটকক্ষ একহাজার ২৫২।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
সিটি নির্বাচনে সাধারণ কেন্দ্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ১৯ জন করে এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২৩ জন করে ফোর্স মোতায়েন থাকছে। এ ছাড়া, নির্বাচনে পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারদের সমন্বয়ে মোট ২৭টি মোবাইল টিম ও ১৮টি স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত রয়েছে। মাঠে রয়েছে র্যাবের ২৭ টিম ও বিজিবির ২৫ প্লাটুন সদস্য।
যে কেন্দ্রে ভোট দেবেন আতিকুল ও শাফিন
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় উত্তরার আজমপুরের নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভোটকেন্দ্রে ভোট দেওয়ার কথা রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলামের। আর এদিন বেলা ১১টায় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার কথা রয়েছে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাফিন আহমেদের।
ঢাকা সিটি ছাড়াও বৃহস্পতিবার দেশের দুটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়ন পরিষদেও ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বরগুনা জেলার আমতলী পৌরসভা (মেয়র পদ ব্যতিত) ও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভা। এ ছাড়া ১১টি ইউনিয়নে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।