২৮ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ- ডাকসু’র নির্বাচন যতটা আশান্বিত করেছিল, ভোট শুরুর মুহূর্ত থেকে একের পর এক অনিয়মের অভিযোগে ততটাই প্রশ্নবিদ্ধ ও ‘কলঙ্কিত’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে বলে মনে করেন ডাকসু’র সাবেক নেতারা। তারা বলছেন, আইয়ুব খানের আমলেও ডাকসু’র গায়ে আঁচড় পড়েনি। এবারের এই কলঙ্ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ডাকসু’র সুনাম ও সম্মান ধ্বংস করেছে।
সাবেক এই নেতারা বলছেন, প্রশাসনের শুভ বুদ্ধির উদয় হলে দ্রুত নির্বাচন বাতিল করে নতুন কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন দেবে। যদিও উপাচার্য ড. মো. আকতারুজ্জামান বলছেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু এবং একইসঙ্গে উৎসবমুখর পরিবেশে হয়েছে।’
বেলা একটার দিকে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য সব দল ভোট বর্জনের ঘোষণা দিলে ক্যাম্পাস হয়ে ওঠে উত্তপ্ত। অভিযোগের সত্যতার এত প্রমাণ থাকার পরও ভোট বাতিল না করায় প্রশাসনের সমালোচনা করেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের বর্তমান নেতা ও প্রার্থীরা। তারা বলছেন, এই প্রহসনের নির্বাচন ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না।
সাবেক ডাকসু নেতা ও সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সবাই এটাই আশঙ্কা করেছিলাম, সেটি আরও নগ্নভাবে প্রকাশ ঘটতে দেখলাম। এধরনের কলঙ্কজনক ঘটনা আইয়ুব আমলেও ঘটেনি। সেরকম অধঃপতনের মাধ্যমে সারাদেশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অন্ধকারে নিক্ষেপ করা হয়েছে। এটা বরদাস্ত করা যায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান ও ডাকসু’র সম্মান ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতিহাস এখানেই শেষ হবে না। ছাত্রসমাজের প্রতিরোধের মুখে তাদের সংসদ গঠনের অধিকার অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হবে। কর্তৃপক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তারা নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নতুন তফসিল দিয়ে নতুন করে মুক্ত পরিবেশে ছাত্রদেরকে তাদের নেতৃত্ব নির্বাচনের সুযোগ করে দেবে।’
ডাকসু’র সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সরকার সমর্থিত সংগঠনকে জিততে হবেই বলে এবারের নির্বাচনে এসব অনিয়ম করা হয়েছে। এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের মানুষের ভোটকে হাইজ্যাক করে নিয়ে গেছে। আমি তো আগেই বলেছি, বিভিন্ন টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকায়ও এসেছে যে, এবার ডাকসু নির্বাচন হবে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের একটা রেপ্লিকা।’
সর্বশেষ ১৯৯০-৯১ সেশনে ডাকসু’র সাধারণ সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন মনে করেন, ডাকসু নির্বাচনকে কলঙ্কিত করার জন্য সরকারকে চরম মূল্য দিতে হবে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে অনিয়মের আশঙ্কা প্রথম থেকে দেখা দিয়েছে— সব ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি দাওয়াকে উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যখন নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের দিকে যাচ্ছিল, ভিন্ন মতের শিক্ষকদের বাদ দিয়ে নীল দলের শিক্ষকদের দিয়ে নির্বাচন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিলো। ছাত্রলীগ ছাড়া আর সব সংগঠনের দাবি ছিল— ভোটের সময় বর্ধিত করা, হলের বাইরে ভোট কেন্দ্র করা, স্টিলের বদলে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স রাখা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন তা কিছুই করেনি। ডাকসু নির্বাচনকে যে কলঙ্কিত করবে, তাদের আচার-আচরণে তা প্রকাশ পেয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তারপরও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ওপরে ভরসা রাখতে চেয়েছিলাম। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় কৃর্তপক্ষ সরকারের নিয়ন্ত্রণে নয়। ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী তারা স্বাধীন। তারা কারও নির্দেশ মানতে বাধ্য নয়। কিন্তু তাকে (অধ্যাদেশ) এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও ছাত্রলীগ মিলে তা কলঙ্কিত করেছে।’
ছবি: নাসিরুল ইসলাম
আরও পড়ুন:
‘নীল নকশার নির্বাচন করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন’ (ভিডিও)
প্রবেশ গেটের নিয়ন্ত্রণ ছাত্রলীগের হাতে: ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজ
ডাকসু নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে ছাত্রলীগ ছাড়া শঙ্কিত সবাই
সিল মারা ব্যালট উদ্ধার, কুয়েত মৈত্রী হলে ভোট স্থগিত
এক ঘণ্টা দেরিতে রোকেয়া হলের ভোটগ্রহণ শুরু
প্রথম ভোট দিতে সময় লেগেছে ৪ মিনিট
ডাকসু নির্বাচনে ভোট শুরুর আগেই লাইন
ডাকসুর ভোটগ্রহণ শুরু