স্থানীয়ভাবে দ্রুত কলেরা রোগনির্ণয় পদ্ধতির উদ্ভাবন

কলেরা শনাক্তকরণ কিটকলেরা রোগ সংক্রমণের শুরুতেই দ্রুত এবং কার্যকরভাবে তা শনাক্ত করার লক্ষ্যে একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানীরা। বাংলাদেশসহ যে কোনও দেশে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে। উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি) এবং ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালসের বিজ্ঞানীরা যৌথভাবে এই কিট উদ্ভাবন করেন।

বুধবার (১৩ মার্চ) আইসিডিডিআর,বি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানা যায়। এতে বলা হয়, উভয় প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা যৌথ উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কলকিট নামের একটি ডিপস্টিক তৈরি করেছে। তিন বছর কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত গবেষণা ও উন্নয়ন প্রক্রিয়ার শেষে সাশ্রয়ী এই দ্রুত রোগনির্ণয় পরীক্ষা (আরডিটি) পদ্ধতি সব চাহিদা ও দিক-নির্দেশনা পূরণ করেছে। এই কিট ভিব্রিও কলেরি চিহ্নিত করতে সক্ষম। এটি এমন একটি পদ্ধতি যা মলের নমুনাযুক্ত টিউবের মধ্যে ডুবালে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিটের মধ্যে যথাযথ ফলাফল (খালি চোখে দৃশ্যমান রঙ্গীন ব্যান্ড) প্রদর্শন করে।

আইসিডিডিআর,বি-র সংক্রামক রোগ বিভাগের বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী কলকিট তৈরির কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায় যে, এই অঞ্চল থেকেই বিশ্বের সাতটি মহামারীর সবগুলোর বিস্তার ঘটেছে। কলেরা রোগের দ্রুত শনাক্তকরণের ওপর এ-রোগের ব্যবস্থাপনা নির্ভর করে। বর্তমানে কলেরা শনাক্তকরণের উদ্দেশ্যে গবেষণাগারে মলের কালচার পরীক্ষার পাশাপাশি আমদানিকৃত দ্রুত রোগনির্ণয় কিট ব্যবহৃত হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন একটি আরডিটি কলকিট রয়েছে, যা দেশের আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করবে এবং ভবিষ্যতে কলেরার ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোয় রফতানির সুযোগ তৈরি করবে। এর মধ্য দিয়ে প্রাচীন এই রোগের মোকাবেলা এখন স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত কলেরা প্রতিরোধক উপকরণ, যেমন কলেরা টিকা এবং দ্রুত রোগ নির্ণয় করার কিট- এর মাধ্যমে সম্ভব হবে।’

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কলকিটের গবেষণাগার ও মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষা-সংক্রান্ত একটি নিবন্ধ সম্প্রতি বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল প্লস নেগলেক্টেড ট্রপিক্যাল ডিজিজেস-এ প্রকাশিত হয়েছে। এতে দেখা যায় যে মাঠ পর্যায়ে ভিব্রিও কলেরি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কলকিটের সংবেদনশীলতা ও নির্দিষ্টতা বিদেশি আরডিটি-র মতোই। এই মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মোট ৭ হাজার ৭২০ জন রোগীর মলের নমুনা পরীক্ষা করা হয় যেখানে দেখা গেছে, কলকিটের সংবেদনশীলতা শতকরা ৭৬ ভাগ ও নির্দিষ্টতা শতকরা ৯০ ভাগ। অন্যান্য প্রচলিত আরডিটি-র ক্ষেত্রে এগুলো ছিলো যথাক্রমে শতকরা ৭২ ও ৮৬ দশমিক ৮ ভাগ।

কলেরা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে একটি উৎকৃষ্ট মান হলো গবেষণাগারে মল কালচার পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিতকরণ, যা নমুনা তৈরি, পরিবহনে দেরি, দক্ষ কর্মী, সময় (২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা) এবং ব্যয়ের (নমুনা প্রতি ৬ থেকে ৮ মার্কিন ডলার) মতো বিষয়ের প্রতি সংবেদনশীল।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কলেরা একটি অতি প্রাচীন রোগ। বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৩০ কোটি মানুষ এ-রোগের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, যার সিংহভাগ রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায়। বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি মানুষ কলেরার ঝুঁকিতে রয়েছে। এ-রোগটির জন্য প্রধানত ভিব্রিও কলেরি নামের একটি জীবাণু দায়ী, ভিব্রিও কলেরি-র ২শ’র বেশি সেরোটাইপ রয়েছে।