নব নির্বাচিত নেতাদের বরণ করে নিতে সার্বিকভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের কার্যালয় (ডাকসু) ভবন। ভবনটির চারপাশের দেয়ালে ও ভেতর রঙ করা হয়েছে। দেয়ালে করা হয়েছে বিভিন্ন কারুকাজ। নিরাপত্তার জন্য ভবনে সিসি ক্যামেরাসহ দরজায় লাগানো হয়েছে নতুন তালা । তবে দ্বিতলবিশিষ্ট ভবনটির দ্বিতীয়তলার যে ৮ টি কক্ষ থেকে পরিচালিত হবে ডাকসুর কার্যক্রম সেখানে এখনও রাখা হয়নি কোনও আসবাবপত্র।
দীর্ঘ ২৮ বছর ১০ মাস পর গত ১১ই মার্চ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচন না হওয়ার ফলে দীর্ঘদিন কর্মচাঞ্চল্যহীন হয়ে পড়ে থাকা ভবনটিতে এখন প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ভবনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস), সম্পাদক ও সদস্যদের কক্ষ এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত কক্ষগুলোতে দীর্ঘদিন জমে থাকা ধুলো- ময়লা পরিষ্কার করা হয়েছে। লাগানো হয়েছে নতুন ফ্যান। এছাড়া নেতাদের জন্য ২০ টি দৈনিক পত্রিকাও রাখা হচ্ছে।
বুধবার (১৩ মার্চ) সকালে গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, ডাকসু ভবনের দ্বিতীয় তলায় আটটি কক্ষ রয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে প্রথমে পড়ে ডাকসুর অফিস কক্ষ। সেখানে বসে কাজ করছেন আবুল কালাম। তিনি তার সহকারীকে বিভিন্ন বিষয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। বাংলা ট্রিবিউনের রিপোর্টার ও ক্যামেরাম্যান উপস্থিত হলে করমর্দন করেন তিনি। এরপর কাজের কথা বলতে আবুল কালাম সহকারীকে চাবি দিয়ে কক্ষগুলো খুলে দিতে বলেন।
আবুল কালাম আজাদ জানান, কক্ষগুলো পরিষ্কার করে পুরনো জিনিসপত্রগুলো গুছিয়ে রাখা হয়েছে। নতুন আসবাবপত্র ক্রয় করা হয়নি। কারণ, আমরা আসবাবপত্র ক্রয় করলে যদি নেতাদের পছন্দ না হয়, এই কারণে নেতারা দায়িত্ব গ্রহণ করলে তাদের পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী জিনিসপত্র ক্রয় করে কক্ষগুলো সাজানো হবে।
আবুল কালাম বলেন, সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সিসি ক্যামেরাগুলো লাগানো হয়েছে। এসব ক্যামেরা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হবে।
তিনি আরও জানান, ডাকসুর দৈনন্দিন কাজকর্মের জন্য কম্পিউটার, ফটোকপি মেশিন, সিসি ক্যামেরা মনিটরিং করার জন্য একটি মনিটরও ক্রয় করা হয়েছে। এছাড়া ডাকসুর কাজের জন্য একজন কম্পিউটার অপারেটরও নিয়োগ দেওয়া হবে।
গত ১১ মার্চ ৩৭তম ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে ডাকসুর সহ-সভাপতি(ভিপি) নির্বাচিত হয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরল হক নুর। আর জিএস নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। যদিও আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে এ নির্বাচন প্রত্যাখান করে বিভিন্ন প্যানেল। রাতে ফল ঘোষণার পর সভাপতি পদে হেরে যাওয়ায় এই পদে পুনর্নির্বাচনের দাবি করে ক্ষমতাসীন
উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বামজোটের অন্যতম ছাত্রনেতা ও ভিপি লিটন নন্দী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা পুনর্নির্বাচনের দাবিতে উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। আমরা তাকে তিন দিনের মধ্যে দাবি মেনে পুনঃতফসিল ঘোষণার আল্টিমেটাম দিয়েছি। তবে ভিসি আমাদের কোনও কথা দেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, পুনর্নির্বাচন সম্ভব নয়। ডাকসু নির্বাচনে নির্বাচিতদের অভিষেক নিয়মনীতি অনুযায়ী আয়োজন করা হবে।’
উল্লেখ্য, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৫৩-৫৪ শিক্ষাবর্ষে গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে পূর্বনাম পরিবর্তন করে বর্তমান নাম 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ' গ্রহণ করা হয়। ইংরেজিতে এর নাম রাখা হয় DACCA UNIVERSITY CENTRAL STUDENTS UNION (DACSU). সেই থেকে এই সংসদ সংক্ষেপে ডাকসু নামেই পরিচিত। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোট ৩৬ বার ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক হন যোগেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত। ডাকসুর সর্বশেষ ভিপি ও জিএস ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্ঠা আমানউল্লাহ আমান ও দলটির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন। এরপর দীর্ঘদিন ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর থেকে ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন ঢাবি সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সান্ধ্যকালীন স্নাতকোত্তর কোর্সের ছাত্র ওয়ালিদ আশরাফ। প্রায় ১৫ দিন অনশনের পরে উপাচার্য আখতারুজ্জামানের নির্বাচনের আশ্বাসে তিনি অনশন ভাঙেন। এরপর একই দাবিতে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলো আন্দোলন চলমান রাখে। সর্বশেষ নির্বাচন নিয়ে এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়, ২০১৯ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন করতে হবে। এরপরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১১ মার্চ নির্বাচনের আয়োজন করে।
ছবি: নাসিরুল ইসলাম ও আদিত্য রিমন