গণভবনের মিষ্টিমধুর যত ঘটনা



ডাকসু ও হল সংসদে নির্বাচিতদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী (ছবি: ফোকাস বাংলা)ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ—ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ীরা গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় কার্যকর ডাকসু গড়ে তুলতে তার সহযোগিতা কামনা করেন। ভিপি পদে নির্বাচিত নুরুল হক নুর বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার মাতৃসম। প্রধানমন্ত্রীর পা ছুঁয়ে সালাম করে দোয়া চান তিনি।





প্রধানমন্ত্রী ডাকসুসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সংসদের নির্বাচনে বিজয়ীদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এই নেতাদের তিনি মাতৃস্নেহে বিভিন্ন পরামর্শ দেন।
গণভবনের সূত্র জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ডাকসু ও হল সংসদে নির্বাচিতদের সাক্ষাতের অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন জিএস পদে নির্বাচিত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। প্রথমেই তিনি প্রতিটি হল থেকে নির্বাচিতদের মধ্য থেকে একজনকে বক্তব্য দেওয়ার আহ্বান জানান। এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে ১৮টি হল থেকে ভিপি পদে নির্বাচিতরা তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। এরপর বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সংসদে এজিএস পদে নির্বাচিত সাদ্দাম হোসাইন। এরপর নুরুল হক নুরকে বক্তব্য দিতে ডাকা হয়। তিনি বক্তব্য শেষে বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার মাতৃসম। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে সালাম করতে চান। কিন্তু প্রটোকলের কারণে কাছে যেতে পারছেন না। তখন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা তাকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। নুরুল প্রধানমন্ত্রীকে সালাম করলে তিনি হাত দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর স্নেহের সান্নিধ্যে নুর, পাশে শোভন (ছবি: ফোকাস বাংলা)গণমাধ্যম সূত্র জানায়, এসময় নুর প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘আড়াই বছরে আমার মা মারা গেছে। আপনাকে আমি যখনই দেখি আপনার মধ্যে আমি আমার মায়ের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই।’
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কুশল বিনিময় শেষে আবারও দর্শক সারিতে নিজ আসনে গিয়ে বসেন নুর। এসময় অনুষ্ঠান পরিচালনাকারী গোলাম রাব্বানী তাকে প্রধানমন্ত্রীর পাশের আসনে বসার আহ্বান জানান। তখন নুর মঞ্চে উঠে প্রধানমন্ত্রীর পাশে বসেন।
ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভনের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীদের বক্তব্য শেষ হলে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেন। তার বক্তব্য শেষে কেন্দ্রীয় সংসদে নির্বাচিত ২৫ জন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তোলেন। এভাবে একে একে ১৮টি হল সংসদের নির্বাচিতরাই আলাদাভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হাসিমুখে ছবি তোলেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করলে ডাকসুর নির্বাচিত নেতাদের রাতের খাবার খাওয়ানো হয়। খাবারের মেন্যুতে ছিল মোরগ পোলাও, মুরগির রোস্ট, খাসির মাংস, মাছ, টিকা, সবজি, সালাদ, মিষ্টি এবং কোল্ড ড্রিংকস।
প্রধানমন্ত্রীকে সালাম করছেন নুর (ছবি: বাসস)গণভবন সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে ছাত্রলীগ সভাপতি শোভনের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। এতে করে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন শোভন। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শোভন যথাযথ রাজনৈতিক দূরদর্শিতার প্রমাণ রেখেছে। ভবিষ্যতে সে ও আরও ভালো স্থানে যাবে। সে বিজয়ী প্রার্থীকে বুকে জড়িয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে। আমি শোভনকে ধন্যবাদ জানাই। শোভন যা করেছে তা রাজনৈতিক নেতৃত্বের আসল বৈশিষ্ট্য। নির্বাচনে হার-জিত থাকবেই, কিন্তু তা মেনে নিয়েই চলতে হবে।’
শোভনের পরিবারের রাজনৈতিক ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শোভনের পুরো পরিবারকে আমি চিনি। ওর দাদা গণপরিষদের সদস্য ছিলেন। ওর বাবা উপজেলা চেয়ারম্যান। শোভনের পরিবারের সকলেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কারণে সে ভবিষ্যতে আরও ভালো জায়গায় যাবে।’
উল্লেখ্য, ২৮ বছর পর হওয়া গত ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে লড়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্রার্থী নুরুল হক নুরের কাছে পরাজিত হন শোভন। এরপর ১২ মার্চ তিনি ক্যাম্পাসে গিয়ে পরাজয় মেনে নিয়ে নুরকে অভিনন্দন জানান এবং ভবিষ্যতে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।