পদ্মা সেতুতে নবম স্প্যান বসছে বৃহস্পতিবার

৩৪ ও ৩৫ নম্বর খুঁটির ওপর বসবে নবম স্প্যান (ছবি– ফোকাস বাংলা)

স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে নবম স্প্যান বসছে আগামী বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ)। ওই দিন সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩৪ ও ৩৫ নম্বর খুঁটির ওপর বসবে এ স্প্যান। এর মধ্যদিয়ে সেতুর উভয়প্রান্ত মিলিয়ে মূল অবকাঠামোর দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে একহাজার ৩৫০ মিটার।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের দায়িত্বশীল একটি সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, মাওয়া প্রান্তের কুমারভোগ স্টক ইয়ার্ডের জেটি থেকে ৩৬শ’ টন ওজন ক্ষমতাসম্পন্ন ক্রেনবাহী জাহাজ ‘তিয়ান-ই’তে করে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ‘৬-ডি’ নম্বর নবম স্প্যানটি জাজিরা প্রান্তে খুঁটির কাছে আনা হবে আগামীকাল বুধবার (২০ মার্চ) সকালে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে স্প্যানটি নিয়ে ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজ ‘তিয়ান-ই’ মঙ্গলবার রাতেও রওনা হতে পারে।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩৪ ও ৩৫ নম্বর পিলারের ওপর ‘৬-ডি’ নম্বর নবম স্প্যান বসানো হচ্ছে বৃহস্পতিবার। এ কারণে বর্তমানে প্রকল্প এলাকায় সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

তিনি জানিয়েছেন, জাজিরা প্রান্তে ৩৫ ও ৩৬ নম্বর খুঁটির ওপর অষ্টম স্প্যান স্থাপনের পরই ৩৪ ও ৩৫ নম্বর খুঁটিতে নবম স্প্যান বসানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এখন দিনক্ষণ নির্ধারণ হওয়ায় প্রকল্প এলাকায় দিন-রাত কাজ চলছে। এ স্প্যান বসানোর পর পর্যায়ক্রমে ৩৩ নম্বর খুঁটি পর্যন্ত স্প্যান বসানোর কাজ চলবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, পদ্মা সেতুর ২৬২টি পাইলের মধ্যে মঙ্গলবার পর্যন্ত ২০৯টি পাইল স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে স্ক্রিন গ্রাউডিং পদ্ধতিতে ১৮টি খাঁজকাটা পাইল সফলভাবে স্থাপন করা হয়েছে। বাকি ৫৩টি পাইল স্থাপনের প্রক্রিয়া চলমান। অন্যদিকে, জাজিরা প্রান্তে সেতুর সর্বশেষ ৪২ নম্বর খুঁটি থেকে ৩৩ নম্বর খুঁটি পর্যন্ত স্প্যান বসানোর ধারাবাহিকতা রাখার সঙ্গে রেলওয়ে বক্স বসানোর কাজও চলছে। ইতোমধ্যে স্থাপন হওয়া স্প্যানের মধ্যে ১১৫টি রেলওয়ে স্লাব বসে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে, সেতুর জাজিরা পয়েন্টের পাশাপাশি মাওয়া প্রান্তেও কাজ চলছে। দীর্ঘদিন নকশা জটিলতায় এ প্রান্তের কাজ অনেকটাই থমকে ছিল। সেতুর জাজিরা প্রান্তে সব পিলার ৬টি পাইলের ওপর দাঁড় করানো সম্ভব হলেও মাওয়া প্রান্তে নদীর তলদেশে মাটি ও নদী শাসনগত জটিলতায় তা করা যায়নি। তাই এখানে এই নকশায় পরিবর্তন আনা ছিল খুব জরুরি। নকশা পরিবর্তনের বিষয়টি অনুমোদনের মধ্যদিয়ে এ প্রান্তের ৬ এবং ৭ নম্বর পিলার দাঁড় করানো হবে ৭টি পাইলের ওপর।

মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে নির্মিত পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের সাইট অফিসের একটি সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছে, দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর ৬ ও ৭ নম্বর পিলারের চূড়ান্ত অনুমোদন ইতোমধ্যেই দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পদ্মা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের জানান, স্কিন গ্রাউন্টিং তথা বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার মধ্যদিয়ে ৬ ও ৭ নম্বর পিলার স্থাপিত হবে। আগে ৬টি পাইলের সাহায্যে প্রকল্পের একটি মূল পিলার স্থাপন করা হতো। এখন ৬টির স্থলে ৭টি পাইলের মাধ্যমে সেতুর ৬ ও ৭ নম্বর পিলার স্থাপন করা হবে।

তিনি আরও জানান, এই জটিলতায় এতদিন সেতুর ৬ ও ৭ নম্বর পিলার নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। যার ফলে এতদিন মাওয়া প্রান্তে স্প্যান বসানো সম্ভব হয়নি। এখন ৬ ও ৭ নম্বর পিলার নির্মাণকাজ শেষ হলে মাওয়ায় স্প্যান বসানো শুরু হবে। মাঝ নদীতে ১২ ও ১৩ নম্বর পিলার দু’টিও প্রস্তুত করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, কারিগরি জটিলতায় পরের স্প্যানগুলো বসাতে সময় বেশি লাগবে। কারণ সেতুর ৪২টি পিলারের প্রতি ছয়টি পিলারকে একটি মডিউল হিসেবে ধরে পুরো সেতুকে সাতটি ভাগে ভাগ করে চলছে কাজ। সে হিসেবে সাত নম্বর মডিউলের পাঁচটি স্প্যানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন বিচ্ছিন্নভাবে স্প্যান না বসিয়ে একটি করে মডিউলের কাজ ধরা হবে বলে জানিয়েছেন পদ্মাসেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম।

তিনি জানিয়েছেন, এখন থেকে পুরো সেতুর সাতটি মডিউলের কাজ শেষ করেই স্প্যান বসিয়ে দেওয়া হবে। এখন আর বিচ্ছিন্নভাবে স্প্যান বসানোর কাজ হবে না। তিনি জানান, মাওয়া প্রান্তে এখন পুরোদমে কাজ হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর প্রথম স্প্যানটি বসে।