স্থবির ঢাকায় চরম ভোগান্তি

সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

বাসচাপায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দ্বিতীয় দিনেও  শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধে স্থবির হয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকা। বেশিরভাগ রাস্তায় গণপরিবহন নেই বললেই চলে। প্রাইভেট যানবাহনও চলছে কম। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দাবি আদায় না করে তারা ঘরে ফিরে যাবেন না। আর রাস্তায় ভোগান্তির মুখে পড়া মানুষের মধ্যে ছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের সামনের সড়কগুলো বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের অবরোধের মুখে পড়তে হয়েছে গণপরিবহনকে। দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় বসে থাকা, গাড়ি না পেয়ে হেঁটে গন্তব্যে রওনা দেওয়া, বাইক থেকে নেমে পার্কিংয়ে বাইক রেখে হেঁটে অফিসে ঢোকার মতো ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে।

রাস্তায় বসে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

বুধবার (২০ মার্চ) রাজধনীর কুড়িল, প্রগতি সরণি, শাহজাদপুর, রামপুরা, বাড্ডা, মহাখালী, গুলশান, বনানী, সায়েন্স ল্যাব, ফার্মগেট, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে তারা তাদের দাবি জানাতে রাস্তা বন্ধ করে দেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেশিরভাগ রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকে যানবাহন।

ছেলেকে সকালে স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার সময় এধরনের পরিস্থিতি হতে পারে ভাবেননি সায়েমা খাতুন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্কুল ছুটির পর আর  বাসায় ফিরতে পারছি না। গলি দিয়ে কোনোমতে পৌঁছানো যায় কিনা, চেষ্টা করতে গিয়ে আরও  বেশি সময় রাস্তায় বসে থাকতে হলো।’ প্রধান সড়ক এড়াতে গিয়ে সবাই এই ঝামেলায় পড়েছেন বলে জানান তিনি।

অবরোধের কারণে ফাঁকা রাস্তামঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকাল সাড়ে সাতটার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা গেট এলাকায় ‘সুপ্রভাত’  নামে একটি বাসের চাপায় বিইউপির শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহত হন। তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আরিফের বড় ছেলে। এ ঘটনার পর ঘাতক বাস সুপ্রভাত পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল, ঘাতক চালকের ফাঁসির দাবিসহ ১২ দফা দাবিতে নানা স্লোগান দিয়ে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত সড়ক ছাড়বেন না বলেও জানান তারা। মঙ্গলবার রাতেই এ বিষয়ে একটি মামলা হয়েছে।

পাথর ফেলে সড়ক অবরোধ করায় আটকা পড়েছে বাসসকালে উত্তরা থেকে রওনা দিয়ে তিনঘণ্টাতেও বিমানবন্দর সড়কে পার হতে পারেননি বোরহান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি এরপরও এই আন্দোলনের পক্ষে। ভোগান্তি হচ্ছে আমাদের সবারই, কিন্তু আজকে যদি কোনও সমাধানের দিকে না যান, তাহলে কালকে আপনার আপনজনও নিহত হতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘যারা দাবি করছেন, তাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’

মিরপুর রোডের পুরোটাই গাড়িতে ঠাসাঠাসি। এখানে তিন জায়গায় রাস্তা আটকেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। যানবাহন কম থাকায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে কর্মব্যস্ত মানুষকে। সকালে পুরান ঢাকার রায় সাহেব ও বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন। এসময় তারা বেশ কয়েকটি পরিবহনের কাগজপত্রও চেক করেছেন।

সড়কে শিক্ষার্থীদের অবস্থানরাজিব উদ্দিন নামে এক শিক্ষার্থী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি নিরাপদ সড়ক। কিন্তু সরকার এখনও আমাদেরকে নিরাপদ সড়ক উপহার দিতে পারেনি। পরিবহন চালকদের দৌরাত্ম্য ও অনিয়মের কারণেই আজকে সড়ক নরকে পরিণত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এসব পরিবহনের কাগজপত্রের দিকে নজর দেয় না, সেজন্যই আমরা দেখছি।’

গণপরিবহন কম

পরিবহন মালিকদের দাবি, তারা শঙ্কায় থাকার কারণেই রাস্তায় পরিবহন কম নামিয়েছেন। তাছাড়া, গাড়ির কাগজপত্রও পরীক্ষা করছেন শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদেরকে।

একদিকে অবরোধ, অন্যদিকে যানজটজানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দফতর সম্পাদক সামদানি খন্দকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আসলে আন্দোলনের সময় অনেক পরিবহন ভাঙচুর হয়। এছাড়া রাস্তা বন্ধ থাকার কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই স্থানে বসে থাকতে হয়। সেকারণে পরিবহন কিছুটা কম নেমেছে।’