‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের’ শীর্ষক বাজেট আজ

64313293_2421966191197616_6701088011934760960_n

২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আজ বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে। ‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের’ শীর্ষক এই বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ধরা হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা।

টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের প্রথম বাজেট এটি। একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালেরও এটি প্রথম বাজেট। অবশ্য গত সরকারের মেয়াদে তিনি পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে বাজেট প্রণয়নে পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।

অর্থমন্ত্রীর ভাষায় এবারের ‘স্মার্ট’ বাজেটের রাজস্ব ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয় (এডিপি) ধরা হয়েছে দুই লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি থাকছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, এবারের বাজেটে করের হার না বাড়িয়ে বরং করের আওতা বাড়িয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানো হবে। দেশের করদাতার সংখ্যা ২০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১ কোটিতে উন্নীত করার কৌশল থাকছে এবারের বাজেটে। একই সঙ্গে এবারের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের প্রক্রিয়া সহজ করতে এনবিআরের জন্য নতুন করে দিকনির্দেশনা থাকবে। কাস্টমস আইন ও আয়কর আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন এনে সহজবোধ্য ও ব্যবসাবান্ধব করা হবে। সব আমদানি-রফতানি পণ্য শতভাগ স্ক্যানিং করা হবে বলেও বাজেটে উল্লেখ থাকবে।

বাজেটে শিক্ষা খাতের সংস্কার, আর্থিক খাতের সংস্কার, শেয়ারবাজারে সুশাসন ও প্রণোদনা বিষয়ে সংস্কারমূলক দিকনির্দেশনা থাকবে। আর এসবই হবে সাধারণ মানুষের কাছে আকর্ষণীয় ও গ্রহণযোগ্য।

এবারও আকর্ষণীয় ডিজিটাল পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন করা হবে। বাজেট বক্তৃতার বর্ধিত সংস্করণ, মূল বাজেট বক্তৃতাসহ অন্যান্য সব নথি ওয়েবসাইটে প্রকাশসহ জাতীয় সংসদ থেকে সরবরাহ করা হবে।

জানা গেছে, দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসৃজন ও মানবসম্পদকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি হচ্ছে এবারের বাজেট। ২০২০ সালে পালিত হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হবে ২০২১ সালে। এ কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ভিন্ন গুরুত্ব থাকছে।

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ‘ক্ষুধামুক্ত ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা’ গড়তে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার ঘোষণা থাকবে এবারের বাজেটে। ২০২৫ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার। এটি করতে পারলে জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্যের হার ১৬-এর নিচে নেমে আসবে বলে সরকার আশা করছে। এমন ঘোষণাও থাকবে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়। সে লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিস্তার প্রসার ঘটানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বাড়বে এ কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন ভাতা ও সুবিধা।

বাজেট উপস্থাপনের পরদিন শুক্রবার (১৪ জুন) বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের কার্নিভাল হলে বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ভ্যাট আইন কার্যকর করতে ভ্যাটের একটি স্তর ভেঙে ৫টি কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এবারের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের প্রক্রিয়া সহজ করতে এনবিআরের জন্য নতুন দিকনির্দেশনা থাকবে।

২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে করবহির্ভূত আয় ধরা হয়েছে ৩৭ লাখ ৭১০ কোটি টাকা। নতুন বছরে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখার চেষ্টা হবে বলে বাজেটে উল্লেখ থাকছে। আসন্ন বাজেটে ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। বৈদেশিক সহায়তা বাবদ ঋণ নেওয়া হবে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে নেওয়া হবে ২৭ হাজার কোটি টাকা।

নতুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বাড়ানো হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে থাকা ১৪ শ্রেণির জনগোষ্ঠীর পরিধি। এই বেষ্টনীতে নতুনভাবে আরও ১৩ লাখ মানুষকে যুক্ত করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বেষ্টনীর আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা ৭৪ লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ৮৭ লাখে। 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় এবার মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা,  প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তি, অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কার্যক্রম খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, বেদে জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম, হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম, লিভার সিরোসিস, ক্যানসার, কিডনি, স্ট্রোকে প্যারালাইজড ও জন্মগত হৃদরোগীদের আর্থিক সহায়তা, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি, গ্রামীণ দুস্থ মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতা, কর্মজীবী মায়েদের সহায়তা তহবিল ও ভিজিডি কার্যক্রম বাড়ছে। 

নতুন বাজেটের এডিপিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগকে। এডিপিতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ ২৯ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ ২৬ হাজার ১৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২৫ হাজার ১৬৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

পর্যায়ক্রমে বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রথম ১০ নম্বরে থাকা মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হচ্ছে−বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১৫ হাজার ৯০৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ৫৯৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ৯ হাজার ৯৩৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৯ হাজার ২৭০ কোটি টাকা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ ৮ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা, সেতু বিভাগ ৮ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৬ হাজার ২৫৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা খসড়া বরাদ্দ ধরা হয়েছে।