রোহিঙ্গাদের ভাষানচরে স্থানান্তরে জাতিসংঘের সম্মতি চায় সরকার





রোহিঙ্গা (ছবি: ফোকাস বাংলা)রোহিঙ্গাদের ভাষানচরে স্থানান্তরে জাতিসংঘ সম্মত না হলে পরবর্তী জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানে (জেআরপি) তহবিল সংগ্রহে সহায়তা দেবে না সরকার।
বুধবার (২৪ জুলাই) রোহিঙ্গা বিষয়ক ন্যাশনাল টাস্কফোর্স বৈঠকে জাতিসংঘের এজেন্সিগুলোকে এই বার্তা দিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক।
মিয়ানমারে জাতিসংঘ সংস্থাগুলো কী করছে সে বিষয়েও সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিতে তাদের বলা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাসহ গোয়েন্দা সংস্থা, এএফডি, পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, কোস্ট গার্ড এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা এতে উপস্থিত ছিলেন। জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা, ইউএনএইচসিআর, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম, ইউএনএফপিএ এবং ইউনিসেফের প্রতিনিধিরা বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রথম দুটি জেআরপিতে তহবিল সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশ সহায়তা করেছিল। কিন্তু পররাষ্ট্র সচিব এবার তাদের পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, যদি রোহিঙ্গাদের ভাষানচরে স্থানান্তরের বিষয়টি আগামী জেআরপিতে উল্লেখ না থাকে, তবে তহবিল সংগ্রহের কাজে সরকার আর সহায়তা করবে না।’
প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ভাষানচরে ২৭ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারকে স্থানান্তরের জন্য ক্যাম্প বানানো হয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর তীব্র বিরোধিতার কারণে এর বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।
২০১৮ সালে প্রথম জেআরপিতে সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান এবং দ্বিতীয় জেআরপিতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মাদ শাহরিয়ার আলম তহবিল সংগ্রহের জন্য বিশ্বের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন।
আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, বৈঠকে জাতিসংঘের টাকা খরচের স্বচ্ছতার বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব উষ্মা প্রকাশ করেন। তারা কোন খাতে কত টাকা খরচ করছেন তার হিসাব সরকারকে দেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘তারা রোহিঙ্গাদের পেছনে কত টাকা খরচ করছে এবং প্রশাসনিক ব্যয়ের পেছনে কত টাকা খরচ করছে তার হিসাব দেওয়ার জন্য তাদের বলা হয়েছে।’

সাধারণভাবে যাদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করা হয় জাতিসংঘ তাদের পেছনে ৩৫ শতাংশ খরচ করে। বাকি ৬৫ শতাংশ নিজেদের বেতন-ভাতা ও আনুষঙ্গিক খরচে ব্যয় করে তারা।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এছাড়া আগামী জেআরপিতে নিরাপত্তা বিষয়ক একটি কমপোনেন্ট রাখার বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব তাদের তাগিদ দিয়েছেন।’
রোহিঙ্গাদের কারণে সরকার কক্সবাজারে পুলিশ, বিজিবি, কোস্ট গার্ড ও আনসার ফোর্স মোতায়েন করেছে। এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের নজরদারি বাড়িয়েছে।
আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, জাতিসংঘ সংস্থাগুলো এবং অন্যান্য এনজিও যেন রোহিঙ্গাদের মধ্যে নগদ টাকা বিতরণ না করে সে বিষয়েও পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়া হয় বৈঠকে।
ওই কর্মকর্তা জানান, পরিবার পরিকল্পনার ওপর জোর দিয়ে পররাষ্ট্র সচিব জেআরপিতে এ বিষয়ে আরও বরাদ্দের তাগিদ দেন জাতিসংঘকে।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জনসংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। প্রতিদিন ৭০ থেকে ৯০ জন শিশু জন্ম নিচ্ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।’