মানবাধিকার লঙ্ঘন, আইওরা’র সদস্য হতে পারলো না মিয়ানমার

nonameমানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে ইন্ডিয়ান ওশেন রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওরা) সদস্যপদ দেওয়া হয়নি মিয়ানমারকে। পরপর দুই বছর দেশটির আবেদন প্রত্যখ্যান করেছে সংস্থাটি। গত মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠকে তাদের আবেদন প্রত্যাখান করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব মোহাম্মাদ খোরশেদ আলম ওই বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
২০১৭ সালে মালদ্বীপ ও মিয়ানমার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করে। পরের বছর মালদ্বীপ সদস্য হয়। কিন্তু মিয়ানমারের আবেদন মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে প্রত্যাখ্যান করা হয়।

এ বছরে মিয়ানমার আবার পুরোনো আবেদনের ওপর আলোচনার জন্য আইওরা-র বর্তমান চেয়ারম্যান দক্ষিণ আফ্রিকাকে অনুরোধ করলে এটি আবার উপস্থাপন করা হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের প্রস্তাব গতবার প্রত্যাখানের পরও কেন আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেটি জানতে চাওয়া হয়। এছাড়া গত বছর মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য তাদরে আবেদন প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে সমাধানের জন্য দেশটি লিখিত কোনও বক্তব্য দিয়েছে কিনা জানতে চায় বাংলাদেশ। এরপর সর্বসম্মতক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি বলে মিয়ানমারের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে সংস্থাটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মাদ খোরশেদ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি আমাদের অবস্থান এবং সামনের দিনগুলিতেও এটি অব্যহত থাকবে।’ আইওরা-র বর্তমান সদস্য রাষ্ট্র ২২টি।

মহিসোপানের দাবি মীমাংসা:

বঙ্গোপসাগরে ২০০ নটিক্যাল মাইলের পর বাংলাদেশের মহিসোপান কতদূর বিস্তৃত হবে তার জন্য ২০১১ সালে জাতিসংঘের কন্টিনেন্টাল শেলফ কমিশনের কাছে আবেদন করে সরকার। ৫৫তম দেশ হিসাবে বাংলাদেশ এই আবেদন করে। আশা করা হচ্ছে, আগামী বছরের শেষদিকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন।

মিয়ানমার ১৬তম দেশ হিসেবে এবং ভারত ৪৮তম দেশ হিসেবে কমিশনের কাছে আবদন করেছে। উভয় দেশই বাংলাদেশের মহিসোপানের দাবির বিপক্ষে তাদের আপত্তি জানিয়েছে। আবার বাংলাদেশও মিয়ানমার ও ভারতের মহিসোপানের দাবির বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশের মহিসোপান কতদূর হবে সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের একটি নির্দেশনা আছে। ওই নির্দেশনার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ মহিসোপানের সীমানা দাবি করেছে।’

মিয়ানমারের মহিসোপানের সিদ্ধান্ত অনেক আগেই হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কারণ তারা ১৬তম দেশ হিসেবে আবেদনকারী। কিন্তু আপত্তির কারণে এখনও এই সিদ্ধান্ত তারা পায়নি।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও মিয়ানমার আপত্তি দিয়েছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত বাধাগ্রস্ত হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের আবেদন আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া। এ বিষয়ে কোনও সমস্যার আশঙ্কা করছি না।’

ভারতের আপত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভারতও সিদ্ধান্ত এখনও পায়নি। আমরা আলোচনা করছি উভয় দেশ যেন তাদের আপত্তি প্রত্যাহার করে নেয়।’

২০০৯ সালে সুমদ্রসীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে মিয়ানমার ও ভারতের বিরুদ্ধে। ২০১২ সালে বাংলাদেশ-মিয়ানমার মামলার রায় বের হয় এবং ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে মামলার রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে বাংলাদেশের মহিসোপান কতদূর হবে সে বিষয়ে পরিষ্কার নির্দেশনা দেন আদালত।