হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে টার্মিনাল ভবনের উত্তর পাশেই এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ার। এই টাওয়ারে বেবিচকের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা রেডিওয়ের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক বিমান ও হেলিকপ্টারের পাইলটদের চলাচলে নির্দেশনা দেন। বাংলাদেশের আকাশসীমায় বিমানের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ, আবহাওয়ার তথ্য দেওয়া, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড্ডয়ন-অবতরণের অনুমতি, বিমানবন্দরের গ্রাউন্ডে চলাচল, পার্কিং–এই বিষয়ের আলোকে পৃথক পৃথক রেডিও চ্যানেলের মাধ্যমে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা পাইলটদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন।
এদিকে, পুরনো রাডার সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি শনিবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার কারণে পুরোপুরি রেডিও ব্যবস্থার ওপর নির্ভর থাকতে হয় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার ও পাইলটদের। অন্যদিকে, বেবিচকের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে রয়েছে জনবল সংকট। এই জনবল সংকট, পুরনো রাডার, দুর্বল রেডিও সিস্টেমের কারণে বাড়তি চাপে থাকতে হচ্ছে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেবিচকের সাবেক পরিচালক (এটিএস অ্যান্ড অ্যারোড্রমস) নুরুল ইসলাম বলেন, ‘রাডার, রেডিওসহ অনেক যন্ত্রাপাতি পুরনো হয়ে গেছে। এ কারণে প্রায় সময় সমস্যা সৃষ্টি হয়। দেশের আকাশে বিমান চলাচলও বেড়েছে, ফলে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের যান্ত্রিক ত্রুটি হলে বাড়তি চাপের মধ্যে থাকতে হয়।’
বেবিচক সূত্র জানায়, হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে টার্মিনাল ভবনের উত্তর পাশেই এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারে ধরন অনুসারে একাধিক রেডিও চ্যানেলে বিমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বাংলাদেশের আকাশসীমা ব্যবহার করে উড়ে যাওয়া বিমানগুলোকে গতিপথ, আবহাওয়ার তথ্য ‘ঢাকা টাওয়ার’ কল সাইনে ১২৫ দশমিক ৭ মেগাহার্ডজে ও ১১৮ দশমিক ৩ মেগাহাডর্জে নির্দেশনা দেন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা। ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে চাইলে ‘ঢাকা অ্যাপ্রোচ’ কল সাইনে ১২১ দশমিক ৩ মেগাহার্ডজ যুক্ত হয়ে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয় পাইলটদের। বিমানবন্দরে অবতরণের পর রানওয়ে থেকে কোন পথে গিয়ে বিমান কোন বোডিং ব্রিজে রাখা হবে, সে তথ্য ‘ঢাকা গ্রাউন্ড’ কল সাইনে ১২১ দশমিক ৮ মেগাহার্ডজে নির্দেশনা দেন কন্ট্রোলাররা। একইভাবে কোন পথ দিয়ে যাত্রী নিয়ে বিমান উড্ডয়নের জন্য রানওয়েতে যাবে, সেই নির্দেশনাও দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেবিচকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কোন বিমান কোন পথে, কোন উচ্চতা দিয়ে উড়ে যাবে, তা কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে ঠিক করে দেন কন্ট্রোলাররা। একইভাবে কোন বিমান কখন, কোন পথ দিয়ে অ্যাপ্রোচ করে উড্ডয়ন, অবতরণ করবে, সেটিও কন্ট্রোলারদের নির্দেশনা মতোই হয়। এ কাজগুলো রেডিও’র মাধ্যমে যোগাযোগ করে করা হয়। দেশে বিমান চলাচল আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে। এক সঙ্গে অনেক উড়োজাহাজ বাংলাদেশের আকাশসীমা দিয়ে উড়ে যায়। কিন্তু বেবিচকের সে অনুপাতে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলারের সংখ্যা বাড়েনি। ফলে জনবল সংকটের কারণে কন্ট্রোলারদের এমনিতেই বাড়তি চাপে থাকতে হয় সব সময়। এছাড়া, পুরনো যন্ত্রপাতির কারণে নতুন করে চাপ বেড়েছে। দেশের আকাশসীমা নিরাপদ রাখতে দ্রুত এ সমস্যা সমাধান করা জরুরি। ’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, ‘বিমান চলাচলের জন্য নেভিগিয়েশন ও কমিউনিকেশন বর্তমান যুগে অটোমেটেড হয়ে গেছে। ওই ধরনের সিস্টেম আমরাও ইনকরপোরেট করার চেষ্টা করছি। শিগগিরই এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (যার সঙ্গে রাডার, নেভিগিয়েশন, কমিউনিকেশন সিস্টেম ইন্ট্রিগ্রেটেড থাকে) স্থাপন করা হবে। যে হারে এয়ার ট্রাফিক বাড়ছে, তা কন্ট্রোল করতে হলে অটোমেটেড সিস্টেম দরকার। এর মাধ্যমে আমাদের বিমান চলাচল ব্যবস্থা অনেক নিরাপদ হবে।’ এর সুফল শিগগিরই পাওয়া যেতে পারে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।