এ প্রসঙ্গে জাবের বলেন, ‘বিমানবন্দরে লাগেজ কাটার ঘটনা ঘটে এটা শুনেছিলাম। কিন্তু এভাবে ব্যাগ গায়েব হয়ে যাবে ভাবিনি। প্রথমে ভেবেছিলাম বিমানবন্দর বা এয়ারলাইনসের কেউ চুরি করেছে, কিন্তু অন্য যাত্রী নিয়ে যাবে এটা ভাবিনি।’
শুধু জাবের দম্পতি না, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাগেজ কাটা, চুরি নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার ও নজরদারি বেড়েছে। এরপরও লাগেজ চুরি হচ্ছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভুলবশত অনেক যাত্রী আরেকজনের লাগেজ নিয়ে যাচ্ছেন। অনিচ্ছাকৃত ভুলের পাশাপাশি চুরির ঘটনাও ঘটছে। লাগেজ না পেয়ে প্রথমে বিমানবন্দর ও এয়ারলাইনস কর্মীদের দিকেই অভিযোগ যাত্রীদের। এপ্রিল থেকে আগস্টে কমপক্ষে ১১ যাত্রীর কাছ থেকে অন্য যাত্রীর লাগেজ উদ্ধার করেছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একই রকম লাগেজ হওয়ায় অনেক যাত্রী ট্যাগ চেক না করে অন্য যাত্রীর ল্যাগেজ নিয়ে চলে যায়। এসব ক্ষেত্রে ভোগান্তি হলেও যাত্রীরা লাগেজ ফেরত পান। কখনও কখনও ভুলে বিমানবন্দরে ব্যাগ ফেলে যান যাত্রীরা। তবে অনেক যাত্রী লাগেজ বেল্ট থেকে অন্য যাত্রীর লাগেজ চুরি করে নিয়ে যান। এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত ১৪২ জনকে লাগেজ ফেরত দিয়েছে আর্মড পুলিশ।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দরে দেশি-বিদেশি ৩৯টি এয়ারলাইনসের ফ্লাইট পরিচালিত হয়। এসব এয়ারলাইনসের দিনে গড়ে ২৫০টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। এরমধ্যে ১৩০টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ওঠানামা করছে। যাত্রীদের লাগেজ দ্রুত পেতে নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন, জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। অন্যদিকে বিমানবন্দরের বিভিন্ন স্থানে বাড়ানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। বিমানবন্দরের কর্মরত কর্মী, ল্যাগেজ হ্যান্ডলিং কর্মীদের ওপর বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। বিমান থেকে নামার পর তাদের দেহ তল্লাশি করা হয়। এরপরও কারও যাত্রী হয়রানি, চুরির সঙ্গে সম্পৃক্ততা ধরা পড়লেই চাকরিচ্যুত করাসহ নেওয়া হচ্ছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।
বর্তমানে কোনও যাত্রীর লাগেজ হারালে এয়ারলাইনসকে প্রতি কিলোগ্রামের জন্য ২০ ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হওয়া আকশপথে পরিবহন আইন অনুযায়ী লাগেজ হারালে এয়ারলাইনসকে দিতে হবে ১৪০৭ ডলার। ফলে লাগেজ চুরির ঘটনায় উদ্বেগ বেড়েছে এয়ারলাইনসগুলোর।
রিজেন্ট এয়ারওয়েজের সহকারী মহাব্যবস্থাপক কেএম জাফরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিশ্বের সব বিমানবন্দরে যাত্রীরা ট্যাগ মিলিয়ে নিজেদের ব্যাগ লাগেজবেল্ট থেকে সংগ্রহ করেন। কিন্তু আমাদের বিমানবন্দরে অনেক যাত্রী ট্যাগ চেক করেন না। ফলে অনেকেই একই রকম দেখতে আরেক যাত্রীর ব্যাগ নিয়ে চলে যাচ্ছেন। আবার কোনও কোনও যাত্রী আরেক যাত্রীর ব্যাগ চুরি করছে। যাত্রীরা শুরুতে ভাবেন বিমানবন্দরের কেউ চুরি করেছে।’
কেএম জাফরুজ্জামান বলেন, ‘নতুন আইনে জরিমানার হার বেড়েছে। এ কারণে এখন আমাদের সব যাত্রীকে চেক করতে হচ্ছে। এ কাজের জন্য জনবল বাড়াতে হয়েছে। আবার চেক করার কারণে সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তিও হচ্ছে। কিন্তু কে চুরি করছে, কে ভুল করে অন্য যাত্রীর ব্যাগ নিচ্ছে— এটা নিশ্চিত হয়ে ব্যাগ হস্তান্তর করা ছাড়া আমাদের আর কোনও উপায়ও নেই।’
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবু সাঈদ মেহবুব খান বলেন, গত তিন মাসে বিমানবন্দরে যাত্রীদের লাগেজ কাটা হয়েছে এমন অভিযোগ আসেনি। বিমানবন্দরের সর্বত্র সিসি ক্যামেরা আছে। এগুলো ২৪ ঘণ্টা মনিটরিং হয়। ফলে কেউ চুরি করলে ধরা পড়বে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক বলেন, ‘যাত্রীরে দ্রুত সময়ের মধ্যে এখন লাগেজ পাচ্ছেন। চুরির ঘটনা দুই একটা ঘটছে না, তা নয়। যারা চুরি করছে তারা জানে না যে প্রত্যেক জায়গায় আমাদের সিসি ক্যামেরা আছে। একমাত্র বিমান থেকে ব্যাগ নামানোর জায়গায় সিসি ক্যামেরা নেই। তবে বিমান থেকে নামার পর তাদের তল্লাশি করা হয়, একইসঙ্গে তাদের পকেটবিহীন পোশাক দেওয়া হবে। আমাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। লাগেজ কাটা, চুরি করে পার পেয়ে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই।’