তবে, সাব কমিটির প্রধান মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম) বলেন, ‘তারা মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রেণি বিভাগ বা কোনও মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা চূড়ান্ত করেননি। বিষয়িটি নিয়ে শিগগিরই কমিটির সভাপতির সঙ্গে বসবেন।’ সংজ্ঞায় মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রেণি বিভাগ করার প্রস্তাব দেওয়ার সম্ভবনা নেই বলেও তিনি জানান।
জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির চতুর্থ বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সামঞ্জস্য করার জন্য রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে সাব কমিটি গঠন করা হয়। ওই সাব কমিটি ২৫ জুন বৈঠক করে তিন দফা খসড়া সুপারিশ প্রণয়ন করে। ওই বৈঠকে সাব কমিটির সদস্য ছাড়াও বিশেষ আমন্ত্রণে সংসদীয় কমিটির সভাপতি শাজাহান খান ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
ওই বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নির্ধারণে মুক্তিযোদ্ধাদের তিনটি শ্রেণিবিভাগ করার প্রস্তাব করা হয়। এখানে মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোদ্ধা বলতে— যারা মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করেছেন ও যুদ্ধের সময় যারা যুদ্ধ করতে সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে বোঝানো হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
সহায়ক শক্তি বলতে— যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বিশ্বে জনমত গঠনে সাহায্য করেছেন, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী, এমএনএরা, এমপিরা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী ও কলাকুশলীরা, দেশ ও দেশের বাইরে দায়িত্ব পালনকারী বাংলাদেশি সাংবাদিকরা, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা, মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবাদানকারী মেডিক্যাল টিমের ডাক্তার, নার্স ও সহকারীরা প্রভৃতি ব্যক্তিবর্গ।
ভিকটিমস বলতে— পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের দ্বারা নির্যাতিত ব্যক্তিবর্গ ও বীরঙ্গনাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি প্রস্তাব করা হয়।
এছাড়া সংজ্ঞা নির্ধারণে ভিয়েতনাম ও ফ্রান্সসহ বহির্বিশ্বের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের দেশে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, তা জানা প্রয়োজন বলে বৈঠকের আলোচনায় উঠে আসে। পরে বৈঠকে আলোচিত বিষয়গুলো সুপারিশ আকারে নিয়ে আসা হয়।
বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধের বিদ্যমান সংজ্ঞায় ‘যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন ট্রেনিং বা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন’ শব্দগুলো পুনর্বিবেচনার জন্য মন্ত্রণালয় সুপারিশ করেছে।
এক্ষেত্রে কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, অনেক মুক্তিযোদ্ধা দেশ ছেড়ে যাননি, দেশের ভেতরে থেকে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের আক্রমণ পরিচালনা করেছেন।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাব কমিটির প্রধান রফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সংজ্ঞা নির্ধারণ নিয়ে একটি বৈঠক করেছিলাম। এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিষয়টি নিয়ে কমিটির সভাপতির সঙ্গে আমরা আবার বসে খসড়া নির্ধারণ করবো। পরে বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলবো।’
এদিকে সংজ্ঞা নির্ধারণে পূর্বের বৈঠকের সুপারিশের অগ্রগতি বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কমিটিতে জানানো হয়, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-২০১৮ এ মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন-২০০২ সংশোধনীর লক্ষ্যে যে খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে, সেখানেও ট্রাস্ট আইনের ওই সংজ্ঞা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে, এ বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম-এর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি ইতোমধ্যে একটি সভায় মিলিত হয়েছে। পরবর্তী সভার দিন ধার্য্যের অপেক্ষায় রয়েছে। সংজ্ঞা নির্ধারণের বিষয়টি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পরিচালিত হচ্ছে।
সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বৈঠকে কমিটি ১৯৮৫ সালে জন্মগ্রহণকারীর মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুপারিশ করেছে।
কমিটির সভাপতি শাজাহান খানের সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক, রাজি উদ্দিন আহমেদ, মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম), কাজী ফিরোজ রশীদ এবং ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল অংশগ্রহণ করেন।