ব্যাংক সংস্কারে ১০ দফা সুপারিশ

সরকার জেনে-শুনে ব্যাংকের সমস্যা সমাধান করছে না: সুজন

‘ব্যাংকিং খাত নিয়ে উল্টাপাল্টা পদক্ষেপ বন্ধ করুন: ব্যাংকিং সংস্কার কমিশন করুন’ শীর্ষক বৈঠকে আলোচকরাদেশে ব্যাংকঋণ নিয়ে পাতানো খেলা চলছে বলে অভিযোগ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। সংগঠনটির অভিযোগ, সমস্যার প্রকৃত রূপ সরকার, ব্যাংকার ও ঋণখেলাপি—সবারই জানা। কিন্তু জেনে-শুনেই সরকার এই সমস্যাগুলো সমাধানের পদক্ষেপ নিচ্ছে না। একইসঙ্গে  ব্যাংকিং সেক্টরের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে ১০ দফা সুপারিশ করে সুজন। শনিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিতে এক গোলটেবিল বৈঠকে এই সুপারিশ করা হয়।

‘ব্যাংকিং খাত নিয়ে উল্টাপাল্টা পদক্ষেপ বন্ধ করুন: ব্যাংকিং সংস্কার কমিশন করুন’ শীর্ষক বৈঠকে সুজনের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির প্রাক্তন সভাপতি  অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম। তিনি  ব্যাংকিং খাতের বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে ১০ দফা সুপারিশ করেন। সুপারিশগুলো হলো—তিন বছরের জন্য একটি খেলাপিঋণ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে প্রত্যেক ব্যাংকের শীর্ষ দশজন ঋণখেলাপিকে চূড়ান্ত বিচারে দ্রুত শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা, ব্যাংকিং খাতের জন্য আলাদাভাবে ন্যায়পাল নিয়োগের ব্যবস্থা করা, মন্দঋণ আদায়ের জন্য ‘ডেট রিকভারি এজেন্সি’ গঠন করা, অর্থঋণ আদালতে কিংবা ট্রাইব্যুনালে কোনও ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রায় হলে বন্ধকি সম্পত্তি নিলাম করার জন্য বর্তমানে যে আবারও মামলা করার  নিয়ম বাতিল করা,  প্রতিটি ব্যাংকের শীর্ষ দশটি ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের নাম মন্দঋণের জন্য এক বছরের বেশি সময়ের জন্য তালিকাভুক্ত হলে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর কি-পার্সনকে গ্রেফতার করার বিধান করা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে বাতিল করা,  রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের কয়েকটি ব্যাংকে ‘মার্জারের’ মাধ্যমে বড় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে একীভূত করার ব্যবস্থা করা, ব্যাংকিং খাত থেকে খুব বড় ঋণ ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়া বন্ধ করা, ব্যাংক মালিক ও ব্যাংকের পরিচালকদের ‘ইনসাইডার লেন্ডিং’ করা এবং অবিলম্বে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাংকিং সংস্কার কমিশন গঠন করা।

গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কখনও গ্রোথ নিয়ে গর্ব করেননি, তিনি  মানুষের মধ্যে আয়-বৈষম্য কমিয়ে আনার কথা বলেছেন। অথচ আজকের সরকার গ্রোথ নিয়ে গর্ব করছে। ক্যাসিনো চালিয়ে অনেকে যেমন সম্রাট হচ্ছেন, তেমনি ব্যাংকিং সেক্টরেও চুরি ডাকাতি করে অনেকে সম্রাট হচ্ছেন। বড়লোকদের হাতে ক্ষমতা। কাজেই তারা ব্যাংক থেকে টাকা মারছেন। ক্যাসিনো কারবার কি বাংলাদেশে প্রথম? দীর্ঘদিন ধরেই চলছে, অথচ কেউ ধরেননি। প্রধানমন্ত্রী যখন বললেন, তখন ধরা গেলো। আর্থিক খাতের ক্যাসিনোগুলোও প্রধানমন্ত্রী চাইলে ধরতে পারবেন। তার সদিচ্ছা থাকলেই সবাই ধরা পড়বেন।’

কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘আমরা বোকার মতো ব্যাংকে টাকা রাখি, আর তারা সবাই যার যার মতো সেই টাকা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা ব্যাংকে টাকা রাখা বন্ধ করে দিলে তারা আর ব্যাংক থেকে চুরি করতে পারবেন না। ঋণখেলাপিদের নাম প্রত্যেক ব্যাংকের সামনে লিখে টাঙিয়ে দেওয়া উচিত, যেন ঢোকার সময় সবাই দেখতে পান। দেশে এখন গণতন্ত্র উল্টাপাল্টা, সমাজব্যবস্থা উল্টাপাল্টা। এত উল্টাপাল্টার মধ্যে ব্যাংকিং খাত সোজা থাকবে, সেটা আশা করা যায় না। ব্যাংকিং খাত সোজা রাখার একমাত্র উপায় হলো গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারকে সোজা পথে আনা।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা, সুজন-সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জনাব রাশেদ আল তিতুমীর প্রমুখ।