মা তোর বদন খানি মলিন হলে, আমি নয়ন জলে ভাসি...

ইডেন গার্ডেন্সে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মহড়া

শুক্রবারের খেলার টিকিট সংগ্রহ করতে বৃহস্পতিবার গিয়েছিলাম কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনে। প্রেস সচিব ড. মোফাখখারুল ইসলাম তাগাদা দিলেন, ‘আমি ইডেনে যাবো, আপনারা যাবেন?’ আমরা হলাম নাচুনে বুড়ি। তাতে হালকা বাড়ি দিলেই চলে। সেখানে উনি দিয়েছেন ঢোলের বাড়ি। তার গাড়িতেই আমরা ছুটলাম ইডেন গার্ডেন্সে।

অপরূপ সাজে ইডেন গার্ডেন্সযারা কম বেশি ক্রিকেট ভালোবাসেন, তারা জানেন, ইডেন মানে ক্রিকেটের স্বর্গ। আর  আপনারা জানেন, স্বর্গে আমার কখনও অরুচি নেই। ইডেনে শুক্রবার দুপুরে যা হবে, তার একটা মহড়া হলো বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। আমরা যখন ঢুকেছি, তখন দুই দলই অনুশীলন করছিল মাঠে। ক্রিকেটিয় অনুশীলনের পর শুরু হলো অক্রিকেটিয় মহড়া।

ভিআইপিদের যাতায়াতের পথে বিছানো হয়েছে গোলাপি কার্পেটওয়ানডে এবং টি-২০ এর পর টেস্ট ক্রিকেটের আকর্ষণ অনেকটাই কমে গেছে। এই সময়ে ইডেন টেস্টের চার দিনের টিকিট বিক্রি হয়ে যাওয়ার খবর আনন্দের সঙ্গে বিস্ময় নিয়ে আসে। গোলাপি নিয়ে একটা উন্মাদনার খবর আগেই জেনেছি। কিন্তু বাস্তবেই সবকিছু গোলাপি করে ফেলা সম্ভব, এটা আগে বুঝিনি। যতই ইডেনের কাছে গিয়েছি, ততই বিস্ময়; আসলেই যে সবকিছু গোলাপি করে ফেলা সম্ভব, তা প্রমাণ করলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। এমনকি ক্লাব হাউজে যে কার্পেট সেটাও গোলাপি। মানে ইডেনে ভিআইপিদের লালগালিচা নয়, গোলাপি গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হবে।

এই ঘণ্টা বাজিয়েই উদ্বোধন হবে টেস্টম্যাচেরসন্ধ্যায় দুই দলের অনুশীলন চলছিল। কারণ, গোলাপি বলে ডে নাইট ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা কারোই নেই। এরপর স্টেডিয়ামে প্রবেশ করলেন একদল তরুণ-তরুণী। তাদের হাতে নানান বর্ণের প্ল্যা-কার্ড। সাধারণত কোনও গেমসের আগে বর্ণাঢ্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু একটি টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচকেও যে উৎসবে বদলে দেওয়া যায়, সেটা দেখিয়ে দিয়ে দিলো কলকাতা। যে ঘণ্টা বাজিয়ে ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, সবার আগ্রহ যেন সেটা নিয়েই। সবাই ছবি তুলছেন ঘণ্টার পাশে দাঁড়িয়ে।

স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ইডেন গার্ডেন্স

শুক্রবার খেলার আগে কী হবে, সেটা কারও কাছে জানার দরকার নেই। ইডেনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মহড়া দেখলেই সবাই বুঝে যাবেন। সবুজ মাঠে তরুণ-তরুণীদের হাতে নানা বর্ণের প্ল্যা-কার্ড। তাদের পাশেই বাদক দল, যারা ম্যাচের আগে দুই দেশের জাতীয় সংগীতের সুর বাজাবে। তারা যখন যন্ত্রে বাজাচ্ছিল— আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি...। তখন, অদ্ভূত এক অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়ে যায় আমার হৃদয়। এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ইডেনের শূন্য গ্যালারিতে যেন অনুরণিত হয় সেই সুর। আর  আমার দু’ চোখে জলের ধারা— মা তোর বদনখানি মলিন হলে, আমি নয়ন জলে ভাসি...