পেঁয়াজের দাম কবে কমবে বলতে পারছেন না বাণিজ্যমন্ত্রী





বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি (ফাইল ছবি: ফোকাস বাংলা)পেঁয়াজের ঘাটতি মেটাতে দেশের অভ্যন্তরে পণ্যটি উৎপাদনের ওপর জোর দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, ‘কবে নাগাদ পেঁয়াজের দাম কমবে তা বলতে পারবো না। মিসর থেকে পেঁয়াজের বড় অংশ এলে এবং দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে এলে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বা শেষ নাগাদ দাম কমতে পারে।’

রবিবার (১ ডিসেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর সংসদের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন। সংসদীয় কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ ওই সংবাদ সম্মেলনের আহ্বান করেন।
প্রধানমন্ত্রী রান্নায় পেঁয়াজ ব্যবহার করছেন না—আপনার পরিবারের খবর কী? এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কোন প্রেক্ষিতে বলেছেন, সেটা আমার জানা নেই। তবে আমরা পরিবারের সদস্যরা চেষ্টা করি (কম খাওয়ার), সবাইকে বলবো ‘ট্রাই টু ইউজ লেস’।’
পেঁয়াজ আমদানিতে একটি দেশের ওপর নির্ভরশীলতা ঠিক হয়নি উল্লেখ করে টিপু মুনশি বলেন, ‘৯০ ভাগ পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে আমরা একটি দেশের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। এটা ঠিক হয়নি। প্রথমে তারা দাম বাড়ালো, পরে ২৯ সেপ্টেম্বর রফতানি বন্ধ করে দিলো। ২-৩ তারিখ আমরা দিল্লিতে গিয়েছিলাম। তারা কথা দিয়েছিল মহারাষ্ট্রের নির্বাচনের পর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার ব্যাপারে চিন্তা করবে। তারা সেটা করেনি।’
স্থায়ীভাবে সংকট মোকাবিলায় উৎপাদন বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে মন্ত্রী বলেন, “সমস্যা সমাধানের একটাই পথ, আমাদের দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো। উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষকরা যেন ন্যায্য দাম পায় সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। আগামীতে আমাদের উৎপাদন বাড়লে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আনা কমিয়ে দেবো। কোনোভাবেই প্রেডিক্ট করতে পারছি না, কবে নাগাদ দাম কমতে পারে। একমাত্র পথ মিসর থেকে বেশি আনা ও নিজেদের প্রডাক্ট বাড়ানো। আশার কথা হলো, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে নিজেদের পেঁয়াজ উঠবে। ‘মুলিকটা’ পেঁয়াজটা আসতে শুরু করেছে। ‘ফুল ফ্লো’ যদি মিসর থেকে আসে, তবে আমরা ৪০-৪৫ টাকা ল্যান্ডেড কস্ট করতে পারবো। যদি তারা দাম না বাড়ায়।”
সংবাদ সম্মেলনে সংসদীয় কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ পেঁয়াজের দাম বাড়ার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশেই এখন পেঁয়াজের দাম বেশি। মিয়ানমারে কম ছিল, এখন বেড়েছে। ভারতে দাম ১৪২ টাকার মতো।’
ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত গরু রফতানি বন্ধ করে দিলো। আমাদের দেশের মানুষ গরু পালতে শুরু করলো। আমরা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। পেঁয়াজের দাম বাড়লো। আমরা মনে করি, দেশের সাধারণ মানুষ বাড়ির খোলা জায়গায় পেঁয়াজ চাষ করবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে ইনশাল্লাহ পেঁয়াজ রফতানিকারক দেশে পরিণত করবো।’
সংকট মোকাবিলায় ভবিষ্যতে টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি করার কথাও জানান কমিটির সভাপতি।
এ সময় ব্যবসায়ীদের ভূয়সী প্রশংসা করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা আমাদের বন্ধু। তারা আমাদের উপকার করেছেন। বিদেশ থেকে আমদানি করা অনেক ঝামেলার। ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে কোনও লাভ না করে যে দামে কিনেছে, সেই দামে টিসিবিকে দিয়েছে।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘ধরপাড়ক আর জোর জবরদস্তি করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। সবাইকে আপন করে, সুখ-দুঃখে ভাগীদার করে, পরস্পরের পাশাপাশি থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।’
আগামী রোজার আগে যাতে পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম না বাড়ে সে লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন অংশীজনকে নিয়ে আগামী সপ্তাহে বৈঠক করা হবে বলে জানান তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা করে আগেভাগে সিদ্ধান্ত নিলে এ ধরনের সমস্যা আর দেখা দেবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে সবজির দাম বাড়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘পরিবহন খরচের কারণে ঢাকার বাজারে সবজির দাম বেশি।’ ভোজ্য তেলের দাম বাড়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে।’
এর আগে তোফায়েল আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, মোহাম্মদ হাছান ইমাম খান, সেলিম আলতাফ জর্জ এবং সুলতানা নাদিরা অংশ নেন।