রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও বিচার অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত: পররাষ্ট্র সচিব

পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকআন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন-সংক্রান্ত মামলার শুনানি শুরু হচ্ছে আগামী ১০ ডিসেম্বর। এ প্রেক্ষাপটে সোমবার (২ ডিসেম্বর) পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ বিষয়ে বাংলাদেশের যা যা করার, সবই করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে। এ বিষয়ে আইনি মতামত দেশের ভেতরে-বাইরে নেওয়া হয়েছে এবং প্রক্রিয়া চলছে।’



তিনি বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশের মনোভাব হচ্ছে, এটি মানবিক কূটনীতি এবং এর সঙ্গে বিচারিক ও দায়বদ্ধতার বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ২০১৮ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বক্তব্য রাখেন, তখন তিনি অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বলেছিলেন, এরা (রোহিঙ্গারা) যে চলে এসেছে তার মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এবং কেন তারা যেতে চাচ্ছে না, এটি খুঁজতে গিয়ে দায়বদ্ধতা ও বিচারের বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দায়বদ্ধতা ও বিচার নিশ্চিত করলে তারা আবার নিজ দেশে ফেরত যাবে। এরা বাংলাদেশে আসে এবং ফিরে যায়। সম্ভবত এর কারণ হচ্ছে দায়বদ্ধতার বিষয়টি সমাধান করা হয়নি।’


মামলা হওয়ার কারণে প্রত্যাবাসন থমকে যাবে কিনা জানতে চাইলে শহীদুল হক বলেন, ‘আমরা দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিকভাবে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। ২০১৭ সালে যখন এই সমস্যা শুরু হয়, তখন প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে জাতিসংঘে নিয়ে গেছেন। সুতরাং মিয়ানমার তখন থেকেই জানে, আমরা দুই দিকেই চেষ্টা করছি। বিষয়টি একে অপরের পরিপূরক।’
শহীদুল হক আরও বলেন, ‘প্রত্যাবাসন ও বিচার অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কারণ, এর আগেও প্রত্যাবাসন হয়েছে ১৯৭৮-৭৯ সালে, ’৯০-এর দশকে হয়েছে। একই রোহিঙ্গারা ফেরত গেছে এবং আবার বাংলাদেশে ফিরে এসেছে। সুতরাং তারা যাতে আর ফিরে না আসে তার জন্য দায়বদ্ধতা অত্যন্ত জরুরি।’
মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আইসিজের আবেদন ওআইসির (ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা) পক্ষ থেকে গাম্বিয়া করেছে। সেখানে বাংলাদেশ কো-চেয়ার এবং অন্যান্য সদস্য রয়েছেন। আমরা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) তদন্ত প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আইসিসি নিজস্বভাবে বিষয়টি কোর্টে এনেছে এবং আমাদের কাছে মতামত চাইলে আমরা সেটি দিয়েছি। আমরা দেখবো আইসিসি কীভাবে এগিয়ে যায়।’ ইতোমধ্যে আইসিসির সঙ্গে বাংলাদেশের একটি সমঝোতা স্মারক হয়েছে, যাতে তারা যেন এখানে কাজ করতে পারে বলে তিনি জানান।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের পক্ষে কে যাবে জানতে চাইলে শহীদুল হক বলেন, ‘এটি আমরা আলোচনা করছি। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলাটি গাম্বিয়া করেছে এবং কোর্টে সওয়াল-জবাব তারাই করবে। সুতরাং সেখান থেকে কে যাবে, সেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের কোর্টে বক্তব্য রাখার কোনও সুযোগ নেই।’

ভাসানচর

ভাসানচর নিয়ে জাতিসংঘ বিরোধিতা করছে কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘এটি ঠিক নয়। জাতিসংঘের টেকনিক্যাল টিম এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। টেকনিক্যাল টিমের ভাসানচর যাওয়ার কথা এবং সেখানে কিছু জিনিস তারা নিশ্চিত করতে চায়। তারপর এই প্রক্রিয়া শুরু হবে।’ এ মাসের মধ্যে কমিটি ভাসানচর যাবে বলে জানান তিনি।