বিচার বিভাগকে জনগণের মৌলিক অধিকারের রক্ষাকবচ হতে হবে: রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদগণতন্ত্রের বিকাশ, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষায় বিচার বিভাগের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষায় রক্ষাকবচের ভূমিকা রাখতে হবে পাশাপাশি স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে। এ জন্য বেঞ্চের বিচারক ও বার আইনজীবীদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বঙ্গভবনের দরবার হলে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম ও হাইকোর্ট এবং অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা আদালতের বিচারকগণের সঙ্গে এক নৈশভোজপূর্ব আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। খবর বাসস’র।

দেশ ও জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে রাষ্ট্রের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে পারস্পরিক ভারসাম্য রেখে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগ পৃথকভাবে দায়িত্বপালন করলেও তারা পরস্পর সস্পর্কযুক্ত। কেউ কারো প্রতিপক্ষ নয় বরং পরস্পর সম্পূরক। তাই আপনাদেরকে পারস্পরিক ভারসাম্য বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করতে হবে।’

পেশাগত জীবনে আইনজীবী হওয়ায় রাষ্ট্রপতি আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের বিচারপ্রার্থীদের জন্য কম খরচে সেবা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একটি সর্বসম্মত ‘ওকালতনামা’ ফি নির্ধারণের নির্দেশ দেন, যাতে গরীব বিচারপ্রার্থীরা অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় না করে এ সুযোগটি পেতে পারেন।

১৯৭৫ সালের পরবর্তী স্বৈরশাসকরা সংবিধানের ৫ম ও ৭ম সংশোধনীর মাধ্যমে তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ৫ম ও ৭ম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখেছে।

জাতির জনকের হত্যার বিচার, জেলহত্যা বিচার, ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারসহ চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার দ্রুত বিচারের ফলে জনমনে বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা বেড়েছে বলেও মন্তব্য করেন রাষ্ট্রপতি।

বিচারপতি ও বিচারকদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদনিজ বক্তব্যে আদালতে বিভিন্ন সময় ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সমালোচনা করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘আইন পেশা প্রকৃতপক্ষে খুবই সম্মানিত পেশা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, নিম্ন ও উচ্চ আদালতের কিছু সম্মানিত আইনজীবী বিচারকে কেন্দ্র করে হইচই ও সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করে বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছেন। এটা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত হতে পারে না।’

এসময় রাষ্ট্রপতি তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে মামলা ব্যবস্থাপনায় গতিশীলতা আনার নির্দেশ দেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বিচারপতি, সিনিয়র আইনজীবী এবং ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।