হিমশীতল জনজীবন

রাজধানীর একটি সড়ক‘কাজে যাবো বইলে সকালে উঠলাম, কুয়াশা আর ঠান্ডায় গা যেন কেঁপে উঠলো। ঘণ্টাখানেক পর সাহস করে দুডো (দুটি) জাম্পার (সোয়েটার) গায়ে দিয়ে একটা মাপলারে মুখ ঢেকে বের হলাম। আজ যদি কাজ না করি তাহলে পরে খাবো কি? পাঁচশ টাকা মাইর যাবে যে? ঢাকায় এত কুয়াশা আমি আগে দেখিনি।’ শীতের তীব্রতা সম্পর্কে এভাবেই বলছিলেন সড়কে কর্মরত শ্রমিক শহিদুল ইসলাম। শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে তার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কাওলা এলাকায় ইউটার্ন নির্মাণকাজে নিয়োজিত। তার সঙ্গে আরও ২২ জন লেবার সড়কে বালু ও ইটের সুরকি ফেলার কাজ করছিলেন। শ্রমিক সবাই একাধিক শীতের কাপড় পরা ছিলেন। 

শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে আমরা কাজ শুরু করি। কিন্তু, আজ প্রচুর শীতের কারণে দেড়ঘণ্টা দেরিতে কাজ শুরু হয়েছে। এই শীতে কোদাল হাতে ধরলেও ব্যথা লাগে। কিন্তু, আমাদের কাজ কইরে খেতে হবে, তাই কাজ করছি।’

আরেক শ্রমিক রফিক বলেন, ‘রোডের কাজ খুব কষ্টের। রাস্তায় চলা গাড়ির সৃষ্ট ঠান্ডা বাতাস সুইটারেও (সোয়েটার) মানে না। শইলে (শরীর) কাঁপুনি দেয়। আইজ  (শুক্রবার) অনেক শীত পড়ছে। এত শীতে কাম (কাজ) করন যায় না।’

রাজধানীর একটি লেকগত কয়েক দিনের তুলনায় শুক্রবার বেড়েছে শীতের দাপট। ঘন কুয়াশা আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ফলে রাজধানীতে শীতও বাড়ছে। পুরো নগরী আজ  কুয়াশাচ্ছন্ন। বেলা বাড়ার পরও কুয়াশা ও শীতের তীব্রতা কমেনি। যেন হিমশীত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

এদিকে, প্রচন্ড শীত আর কুয়াশা থাকলেও ভোর ৬টা থেকে সড়কে দায়িত্ব পালনে করছিল ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। কেউ কানটুপি ও মাপলার পেঁচিয়ে, কেউ হাতমোজা পরে সড়কে দায়িত্ব পালন করছেন। শাকসবজির পসরা সাজিয়ে কাঁচাবাজারগুলোতে ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে সবজি বিক্রেতাদের। তবে শীতের তীব্রতার কারণে ক্রেতার আনাগোনা কম ছিল।

উত্তরা আজমপুরের বিডিআর মার্কেটের কাঁচা সবজি বিক্রেতা সৌমির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজ কয়েকদিন যাবৎ সবজি বিক্রি কম হচ্ছে। আগের মতো বিক্রি নেই। এর মূল কারণ শৈত্যপ্রবাহ।’

এদিকে, সড়কে বেশিরভাগ যানবাহন হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। সড়কে মোটরসাইকেলের সংখ্যা কিছুটা কম দেখা গেছে।

জাতীয় সংসদ ভবনসড়কে দায়িত্ব পালনরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা বলেন, সকাল ৬টায় ডিউটিতে আসতে হয়েছে। এত কুয়াশা আর ঠান্ডা, সড়কে দাঁড়ানোই মুশকিল। গাড়ি চলে আর গায়ে বাতাস লাগে। শীতের পোশাকও ঠান্ডা ঠেকাতে পারছে না।

রেডিসন হোটেলের পাশে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট অপু সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শীত যতই হোক, সড়কে আমাদের থাকতেই হবে। কষ্ট হলেও এটাই আমাদের ডিউটি। যত কিছুই হোক আমরা সড়ক নিরাপদ রাখতে কাজ করছি।’

রাজধানীর কাওলা এলাকায় কাজ করছেন শ্রমিকেরাবিমানবন্দর সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা সিএনজি অটোরিকশাচালক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘দুপুর ১২টা পর্যন্ত মাত্র একটি ট্রিপ পাইছি। আর পাইনি। এখন বসে আছি। শীতের কারণে যাত্রীরা বাসে চলাচল করেন। আর ঠান্ডার মধ্যে আমারও চালাইতে ভালো লাগে না।’

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সারা দিন আকাশ মেঘলা থাকবে। বৃষ্টি হবে থেমে থেমে, কোথাও হালকা কোথাও ভারী। আগামীকাল শনিবারও (২৮ ডিসেম্বর) একই অবস্থা থাকবে। শনিবার ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমতে পারে।