বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তৃতীয় টার্মিনালের ভবন হবে তিনতলা। ভবনটির আয়তন হবে ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার এবং লম্বা ৭০০ মিটার ও চওড়া ২০০ মিটার। বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দর বছরে ৮০ লাখ যাত্রী ধারণে সক্ষম। এটি নির্মিত হলে এই বিমানবন্দর দিয়ে বছরে মোট ২ কোটি যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। এ ভবনটির নকশা করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্থপতি রোহানী বাহারীন। তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিপিজি করপোরেশন প্রাইভেট লিমিটেডের (সিঙ্গাপুর) স্থপতি। রোহানী বাহারীন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ভবনের নকশা করেছেন।
এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম (এডিসি)-এর মাধ্যমে জাপানি কোম্পানি মিতসুবিশি, ফুজিটা ও কোরিয়ান কোম্পানি স্যামসাং—এই তিনটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের নির্মাণকাজ করবে। টার্মিনালটির কাজ শেষ হলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে। ভবিষ্যতে আরও অনেক দেশের বিমান সংস্থার বিমানের এ বিমানবন্দর দিয়ে চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। তৃতীয় টার্মিনালে ২৪টি বোডিং ব্রিজের ব্যবস্থা থাকলেও প্রকল্পের প্রথম ধাপে ১২টি বোডিং ব্রিজ চালু করা হবে। বহির্গমনের জন্য ১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে। এছাড়া, ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ মোট ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে। আগমনীর ক্ষেত্রে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি পাসপোর্ট এবং ১৯টি চেক-ইন অ্যারাইভেল কাউন্টার থাকবে। টার্মিনালে ১৬টি আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে। এছাড়া, অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য চারটি পৃথক বেল্ট স্থাপন করা হবে।
তৃতীয় টার্মিনালে যাত্রীদের দ্রুত সেবা দিতে গ্রাউন্ড সেবায়ও আসবে পরিবর্তন। বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স শাহজালাল বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিচ্ছে। তৃতীয় টার্মিনালে বিমান ছাড়াও অন্য প্রতিষ্ঠান গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে।
শুধু টার্মিনাল ভবনই নয়, আমদানি-রফতানি কার্গো ভিলেজেরও আধুনিকায়ন করা হবে। ৩৫ হাজার ৮৬৩ বর্গমিটার আয়তনের আমদানি কার্গো ভিলেজ ও ২৭ হাজার ১৪৪ বর্গমিটার আয়তনের রফতানি কার্গো ভিলেজ নির্মাণ করা হবে। টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে ভূ-গর্ভস্থ সুড়ঙ্গপথ এবং উড়াল সেতু নির্মাণ করা হবে। যার মাধ্যমে মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগের ব্যবস্থা থাকবে। তৃতীয় টার্মিনালে থাকবে আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। লাউঞ্জ, দোকান, রেস্টুরেন্টসহ সংশ্লিষ্ট অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের যাত্রীসেবার সুবিধাও রাখা হবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, ‘এই টার্মিনাল নির্মাণ সমাপ্তির পর তা হবে সবার প্রত্যাশার একটি সুন্দর ও অত্যাধুনিক বিমানবন্দর।’ আন্তর্জাতিক মানের সেবা নিশ্চিত করতে এই টার্মিনাল তৈরি হচ্ছে বলেও তিনি জানান।