প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ৮ মে ঢাকা থেকে বিমানের ড্যাশ-৮ কিউ ৪০০ বিমানটি ইয়াঙ্গুন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে বাইরে চলে যায়। বিমানটিতে ১ শিশুসহ ২৯ জন যাত্রী, ২ জন পাইলট, ২ জন কেবিন ক্রু ও ২ জন গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। দুর্ঘটনায় ৩৪ জন আহত হন। ওই ফ্লাইটের পাইলট ছিলেন নজরুল ইসলাম শামীম ও কো-পাইলট ছিলেন আনোয়ার পারভেজ আকাশ। ড্যাশ-৮ বিমানটি ৭৪ জন আরোহী বহনে সক্ষম। পরবর্তী সময়ে তারা চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরেন। পাইলট নজরুল ইসলাম শামীম গুরুতর আহত হওয়ায় দেশে ফিরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসা নেন। অন্যদিকে, ওই ফ্লাইটের কেবিন ক্রু ফারজানা গাজী অভ্রও গুরুতর আহত হন। গত ১০ মে তাকে মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার পর অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যাওয়ায় ১২ মে অস্ত্রোপচার করা হয়।
ঘটনা তদন্তে বিমানও একটি কমিটি গঠন করে। বিমানের চিফ অব ফ্লাইট সেফটি শোয়েব চৌধুরীকে প্রধান করে ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিটিতে আরও ছিলেন বিমানের ম্যানেজার (কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স) নিরঞ্জন রায়, ড্যাশ-৮ বিমানের প্রশিক্ষক ক্যাপ্টেন সৈয়দ এম মুয়িম, ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার (লাইন ম্যান্টেনেন্স) মোহাম্মদ হানিফ, ম্যানেজার (ফ্লাইট সেফটি) মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের একজন প্রতিনিধি। এই কমিটির প্রতিবেদনেও পাইলটদের ভুলকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে ফ্লাইটের পাইলট ও কো-পাইলটকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও দায়ের করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুজন পাইলটকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও দায়ের করা হয়েছে এবং এর ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলেও জানান মো. মোকাব্বির হোসেন। তিনি বলেন, ‘সেফটি নিয়েই আমরা প্রতিনিয়ত কাজ করছি। পাইলটদের আরও সতর্ক হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
দুর্ঘটনাটি মিয়ানমারে হওয়ায় তদন্ত করে মিয়ানমার এয়ারক্রাফট ইনভেস্টিগেশন ব্যাঞ্চ। মিয়ানমারকে তদন্তে সহায়তা করে বাংলাদেশের এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন গ্রুপ (এএআইজি)। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়ে, অবতরণের সময়ে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করেননি পাইলট। আবহাওয়া খারাপ থাকার পরও পাইলট নিজে দায়িত্ব পালন না করে কো-পাইলটকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। প্রথমে একবার অবতরণ করতে না পেরে ‘গো-অ্যারাউন্ড’ করা হয়। পরবর্তী সময়ে যখন বিমানটি অবতরণ করে, তখন নির্ধারিত গতির চেয়ে অনেক বেশি গতি ছিল। রানওয়ের ২১-এ নির্ধারিত জায়গা থেকে আরও বেশি দূরে গিয়ে অবতরণ করেছে বেশি গতিতে। পাইলটরা বিমানটির ম্যানুয়াল ও বিমান অবতরণের কোনও স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করেননি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এ দুর্ঘটনায় ৩৪ জন আহত হন। ৪ জন ক্রু ও ৮ জন যাত্রী গুরুতর আহন হন। দুর্ঘটনায় মেইন ল্যান্ডিং গিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ছাড়াও পুরো বিমানটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। খারাপ আবহাওয়ায় কো-পাইলটকে দায়িত্ব না দেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশের এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন গ্রুপের (এএআইজি) প্রধান ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন এম রহমতউল্লাহ বলেন, ‘মিয়ানমার এয়ারক্রাফট ইনভেস্টিগেশন ব্র্যাঞ্চ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আজ আমাদের হাতে প্রতিবেদনটি এসেছে। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে পাইলটের মিস হ্যান্ডলিংয়ের বিষয়টি উঠে এসেছে।’ বিমান অবতরণের সময় পাইলট যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করলে দুর্ঘটনা এড়ানো যেতো বলেও তিনি মন্তব্য করেন।