বঙ্গবন্ধুর ৪৮তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (ছবি: সংগৃহীত)আজ ১০ জানুয়ারি। বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ১৯৭২ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে রক্তস্নাত বাংলার মাটিতে পা রাখেন। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতির প্রত্যাবর্তনে স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় পূর্ণতা পায়। স্বয়ং বঙ্গবন্ধু তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ‘অন্ধকার হতে আলোর পথে যাত্রা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদাররা বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তাকে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি করা হয়। বাঙালি যখন স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করে, বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের কারাগারে প্রহসনের বিচারে ফাঁসির আসামি হিসেবে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালিদের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার পর বিশ্বনেতারা বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। আন্তর্জাতিক চাপে পরাজিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শেষ পর্যন্ত বন্দিদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে সসম্মানে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ২৯০ দিন পাকিস্তানের কারাগারে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর প্রহর গণনা শেষে লন্ডন-দিল্লি হয়ে তিনি ঢাকায় পৌঁছেন ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি।
বঙ্গবন্ধু হানাদারমুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন বিজয়ের মালা পরে। সেদিন বাংলাদেশে ছিল এক উৎসবের আমেজ। গোটা বাঙালি জাতি রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছিল কখন তাদের প্রিয় নেতা স্বাধীন দেশের মাটিতে এসে পৌঁছবেন। প্রচুর মানুষ সেদিন জড়ো হয়েছিল ঢাকা বিমানবন্দর এলাকায়। বিমানবন্দর থেকে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পর্যন্ত রাস্তা ছিল লোকে লোকারণ্য। স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু। দীর্ঘ ৯ মাস পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের গণহত্যার সংবাদ শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঘোষণা দেন, ‘রক্ত দিয়ে হলেও আমি বাঙালি জাতির এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করে যাবো।’
এরপর প্রতিবছর কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি নানা আয়োজনে পালন করে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। এবার আনন্দঘন পরিবেশে উৎযাপিত হতে যাচ্ছে এ দিনটি। ২০২০ সাল তার জন্মশতবার্ষিকী। বছরটি পালিত হচ্ছে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে। তার প্রত্যাবর্তনের দিনেই শুরু হচ্ছে মুজিব বর্ষের ক্ষণগণনা।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন গ্রহণ করেছে নানা কর্মসূচি। এদিন পুরো জাতি বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। দিনটি পালনের অংশ হিসেবে আজ বিকাল পাঁচটায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া সকাল সাড়ে ৬টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন এবং সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে তার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে সংগঠনের সব শাখাকে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস যথাযথ কর্মসূচির মাধ্যমে পালনের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।