গ্রামের অর্থনীতি সামলাতে বঙ্গবন্ধুর ‘টেস্ট রিলিফ’

২৩ জানুয়ারির দৈনিক বাংলাযুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নানা পুনর্গঠনমূলক পদক্ষেপের উদ্যোগ নেন। একের পর এক দেশের কাছে সাহায্য সহযোগিতা চেয়ে মিটিং চলে। পাশাপাশি চলে নিজেদের মতো করে টিকে থাকার পরিকল্পনা প্রস্তুতের কাজও। এরই একটি হচ্ছে টেস্ট-রিলিফ। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দেন— প্রথম দফায় ১৬ কোটি টাকার রিলিফের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দুস্থদের যাবতীয় সহায়তা দিতে প্রস্তুত সরকার।

ঘোষণায় বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চলতি বছর টেস্ট রিলিফ কর্মসূচির জন্য ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশের বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনর্গঠনই টেস্ট রিলিফের উদ্দেশ্য। ঘোষণায় আরও বলা হয়, এতে গ্রামের সমর্থ বেকারদের কর্মসংস্থানও হবে। এতে করে জাতীয় পুনর্গঠনের কাজে গ্রাম যুক্ত হবে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার মেরামত ও পুনর্নির্মাণ, সংযোগ রাস্তার উন্নয়ন, বাঁধ নির্মাণ, ছোট ছোট সেচ কর্মসূচিসহ আরও বেশিকিছু অবকাঠামোগত কাজ করা হবে।

 

২৩ জানুয়ারি অবজারভার

৪০ কোটি টাকার দায়মুক্তি পেলো কৃষক

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের ফলে এদেশের সর্বহারা কৃষকসমাজ ৪০ কোটি টাকা রাজস্ব দেওয়া থেকে রেহাই পেয়েছে। ১৩ জানুয়ারি জনগণের সরকার চৈত্র পর্যন্ত সব ভূমি রাজস্ব ও পাওনা বকেয়া খাজনা সুদসহ মওকুফ করার ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের কৃষকরা তাদের বকেয়া ঋণ হিসেবে দেয় প্রায় ২৫ কোটি টাকা, হাল খাজনার ১৫ কোটি দেওয়া থেকে রেহাই পায়। তাকাবি ঋণ হিসেবে এতকাল কৃষকদের সুদ এবং সার্টিফিকেট জারির খরচ একসঙ্গে দেওয়া লাগতো। বর্তমানে সরকারের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, মার্চ মাসের মধ্যে আসল  ঋণের টাকা শোধ হলে তাদেরকে সব সুদ ও সার্টিফিকেট জারি করার উদ্বৃত্ত ঋণ থেকে রেহাই দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

 

bhyমওলানা ভাসানী দেশে

জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ভারত থেকে ময়মনসিংহ হয়ে আজ  টাঙ্গাইলে পৌঁছেছেন। ময়মনসিংহ ডেপুটি কমিশনার তাকে সীমান্তে অভ্যর্থনা জানান। এদিন বিকাল পোনে তিনটায় হালুয়াঘাট সীমান্তে আসেন মওলানা ভাসানি। ভারতের মেঘালয় প্রদেশের মধ্য দিয়ে তিনি হালুয়াঘাটে পৌঁছান। সেখানে মধ্যাহ্ন ভোজ ও বিশ্রাম শেষে সোয়া পাঁচটায় তিনি ময়মনসিংহের উদ্দেশে রওনা দেন। সেখান থেকে রাত পোনে আটটায় মোটরযানে করে টাঙ্গাইল রওনা দেন। পরের দিন দৈনিক বাংলার খবরে তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের খবর প্রকাশ করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে অবস্থান করেন। টাঙ্গাইলের জনগণ তার আগমনে উৎসবের আয়োজন করে এবং তাকে দেখার প্রতীক্ষায় রয়েছে। টাঙ্গাইলের সন্তোষে মওলানা ভাসানীর যে বাড়ি ছিল, যুদ্ধকালে পাকিস্তান বাহিনী তা নিশ্চিহ্ন করে ফেলে। সেখানে তিনি কোথায় অবস্থান করবেন তা জানা যায়নি। পত্রিকা বলছে, মওলানা সাহেব কলকাতা থেকে বিমানযোগে ঢাকায় আসবেন, ধরে নিয়ে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন ও অন্যান্য সংগঠন তাকে অভ্যর্থনা জানানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল। মওলানার আগমনে টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। অনেক দূর থেকে প্রিয় নেতাকে দেখতে অনেক লোক ছুটে আসে।

মওলানা ভাসানি

জনসেবায় নিযুক্ত সংস্থার সহায়তা নেওয়ার সিদ্ধান্ত

জানুয়ারিতে দেশে ফেরার পর থেকেই দেশ পুনর্গঠনের কাজে হাত দেন বঙ্গবন্ধু। শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘জনসেবা কাজে নিযুক্ত সংস্থা যদি সাহায্য দিতে চায় তা নেওয়া হবে।’ ইন্টারন্যাশনাল ক্যাথলিক চ্যারিটির প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা জানান। তিনি বলেন, ‘৯ মাসে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের ৩০ লাখের বেশি লোক হত্যা করেছে। বিপুল সংখ্যক খাদ্যশস্য বিনষ্ট করেছে এবং দেশের শতকরা ৪০ ভাগ বাসগৃহ পুড়িয়ে ফেলেছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে জাতি গঠনে উদ্যোগ নিতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল ক্যাথলিক চ্যারিটির প্রেসিডেন্ট মোমিয়ে রোদেইন ২২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর সরকারি বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মোমিয়ে রোদেইনের সঙ্গে ক্যাথলিক রিলিফ সার্ভিস বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড় পুনর্বাসন প্রকল্পের পরিচালকও ছিল। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘বাংলাদেশ হানাদার মুক্ত হওয়ার পরে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী সুখে শান্তিতে বসবাস করছে। বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। এখানে জনগণের বিশ্বাসে কোনোরকম হস্তাক্ষেপ করা হয় না।’

বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ডিপি ধরের বৈঠক

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ডিপি ধর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার নিজ বাসভবনে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন। শেখ মুজিবুর রহমান ও মি. ধর আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানাতে অস্বীকার করেন।

এদিন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোসের ৭৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘নেতাজি মুক্তি সংগ্রামের পথ আলোকিত করেছেন। তিনি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোধা। বাণীতে আরও বলা হয়, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জলন্ত প্রতীকের জন্মবার্ষিকীতে আমরা তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। যে প্রদ্বীপের আলো তিনি ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন, তাতে মুক্তি সংগ্রামের পথ উদ্ভাসিত। তিনি অমর অক্ষয়।

চুক্তি বাতিল

বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের নৌবাণিজ্যে কোনও শিপিং লাইন, শিপিং কনফারেন্স, কোনও জাহাজে মাল ভাড়াসংক্রান্ত চুক্তি, জাহাজের মালিক ও এজেন্টের আওতা স্বীকার করে না। উপরোল্লিখিত যেকোনও সংস্থার সঙ্গে পাকিস্তান সরকার, শিপার্স অথবা তাদের প্রতিনিধির কোনও চুক্তি বাংলাদেশ সরকার স্বীকার করে না এবং এধরনের যেকোনও চুক্তি বাতিল বলে ঘোষণা করে।

সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চালুর প্রস্তুতি

২৩ জানুয়ারির পত্রিকায় ঘোষণা দেওয়া হয়, সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চালুর বলিষ্ঠ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হচ্ছে। এদিন শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জনসাধারণ যেন রাজনৈতিক স্বাধীনতার ফল ভোগ করতে পারে, সেজন্য শিগগির দেশে একটি সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চালুর কর্মসূচি নেওয়া হবে।

বিশ্ব শান্তি পরিষদ প্রতিনিধি দলের নেত্রী মাদাম ইজাবেলা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নির্মমতা হিটলারের জঘন্য বর্বরতাকে ছাড়িয়ে গেছে। ৯ সদস্যের এই প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এক সভায় অংশ নেওয়ার সময় এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি।

পত্রিকা কার্টেসি: ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম